রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের তিনটি স্থাপনা এবং বরিশালে নির্মিত শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের শুভ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০২২-এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের প্রধান স্থাপনা জয় সিলিকন টাওয়ার, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম এবং সিনেপ্লেক্স এর উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। একইসময় বরিশালে নির্মিত শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারেরও উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধন ঘোষণাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। এজন্য চারটি বিষয়কে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। এক. আমাদের জনগণ প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। দুই. স্মার্ট অর্থনীতি অর্থাৎ সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে করবো। তিন. স্মার্ট সরকার, ইতিমধ্যে আমরা অনেকটা করে ফেলেছি। বাকিটাও করে ফেলবো। চার. আমাদের পুরো সমাজই হবে স্মার্ট সোসাইটি।
সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এখানে প্রায় ১৪,০০০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা রাজশাহী অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া বরিশালে ৬৬ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশে আইটি খাতে কাঙ্ক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হলে দক্ষ মানব-সম্পদ সৃষ্টির বিকল্প নেই। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পুরণ আরো সহজ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ জানান, বিনিয়োগ অবকাঠামো হিসেবে সারাদেশে ১০৯টি (সরকারী-৯২টি ও বেসরকারী-১৭টি) হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ করছে। বর্তমানে ১০টি হাই-টেক পার্কে পূর্ণদ্দোমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন পার্কে ইতোমধ্যে ২১৩টি (দুইশত তের) প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব পার্কে বেসরকারি সেক্টর থেকে মোট ৫৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৭,৯৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর উদ্যোগে আইওটি, রবোট্রিক্স, ডাটা-এনালাইটিক্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৩৬,০০০ এর অধিক জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়িত সরকারী ও বেসরকারি বিভিন্ন হাই-টেক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ইতোমধ্যে ২২,০০০ জনের অধিক প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দশতলা সিলিকন টাওয়ারে হাই-টেক পার্কের প্রশাসনিক ফ্লোরসহ রয়েছে একটি স্টার্ট-আপ ফ্লোর, ০৬ টি উদ্যোক্তা ফ্লোর এবং ৪-তলা অডিটোরিয়াম ভবন। জয় সিলিকন টাওয়ারের ২য় তলায় স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি এ মিউজিয়ামে থাকছে বঙ্গবন্ধুর জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে তাঁর সংগ্রামী জীবনের অনেকগুলো তথ্য ও উপাত্ত। এছাড়া চারতলা অডিটোরিয়াম ভবনের ৩য় তলায় রয়েছে অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স; ১৭২ আসন বিশিষ্ট এ সিনেপ্লেক্সে শিক্ষা, জ্ঞান ও আদর্শভিত্তিক চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি পরিবেশন করা হবে।