গতকাল ৩ জুলাই ২০২২ বিকেল ৫ টায় অনলাইনে গরু কিনে কোরবানি পশু বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্ম ডিজিটাল কোরবানি হাট (digitalhaat.gov.bd) উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব শম রেজাউল করিম এমপি। প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগের এটুআই-একশপ ও ই-ক্যাবের আয়োজনে ডিজিটাল হাট বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, বলেন, এবার ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু মজুদ রয়েছে। ফলে কোরবানির জন্য কোনরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই। কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে। রোগগ্রস্ত পশু হাটে বিক্রি করতে দেয়া হবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ হয়রানির শিকার হবেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োগ করা হবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও অন্যান্য ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে যে উন্নতি করেছে সেটা সম্ভব হয়েছে সরকারের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন করার কারণে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি হয়েছে। সম্প্রতি ডিবিআইডিসহ আরো চারটি ডিজিটাল প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করেছি। এসব বাস্তবায়ন হওয়ার পর ই-কমার্স খাতে শৃংখলা ও আস্থা আরো উন্নত হবে। এই খাতে উদ্যোক্তা তৈরী করতে সরকার প্রনোদনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী প্রণয়ন করেছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ডিজিটাল হাট থেকে একটি গরু ক্রয়ে করে সেটা গতবারের মতো ই-ক্যাবের মানবসেবা প্রকল্পের মাধ্যমে দান করেন। এটি সিলেটের বন্যা কবলিত এলাকার মানুসের মাঝে বিতরণের অনুরোধ করেন।
আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএনএম জিয়াউল আলম বলেন, ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রির যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে সরকারের ডিজিটাল রেডিনেস যে উন্নত হয়েছে এটা তার প্রমাণ করে। শুধু করোনার কারণে নয় আমাদের দেশের মানুষের ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রতি যে ঝোঁক আছে সেটাই প্রমাণ করে ডিজিটাল হাটের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার সাড়া।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, পশু ক্রয় বিক্রয় ব্যবসাখাতের একটি বড়ো লেনদেন এর সাথে সম্পৃক্ত। এ ডিজিটাল হাটকে যদি সারা বছর করা যায় তাহলে প্রান্তিক চাষী ও খামারীরা সারাবছর অনলাইনে পশু বিক্রির সুযোগ হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, এতবড় একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে এত কম সংখ্যক অভিযোগ প্রমান করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইন এবং আইসিটি বিভাগের কারিগরি সেবার মাধ্যমে যে প্রক্রিয়ায় কাজটি সম্পন্ন হয়েছে এটি খুব সমন্বিত ও কার্যকর একটি উদ্যোগ।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি এইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এসওপি হওয়ার কারণে ই-কমার্স সেক্টরে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। আশাকরি ই-ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ঠ যারা আছেন তারা বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন। ক্রেতা এবং ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষা হয়। এ ব্যাপারে উভয়ের সচেতনতা বৃদ্ধির কথাও বলেন তিনি।
এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ন কবীর বলেন, এবার ডিজিটাল হাটে দুটো নতুন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে গরুর ওজন মাপার ডিজিটাল ক্যালকুলেটর এবং পূর্বাচলে গরু রাখার জন্য একটি জায়গাও রাখা হয়েছে। এছাড়া প্লাটফর্মে যারা পশু বিক্রি করবে তাদেরকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ২০২০ এবং ২১ সালে অনলাইন কোরবানি হাট হিসেবে ডিজিটাল হাট এর সফল বাস্তবায়ন করেছে। ২০ সালে ২৭ হাজার এবং ২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি করে মাইল ফলক সৃষ্টি করেছে ডিজিটাল হাট। আমাদের কর্মীরা ঈদের দিন কাজ করে নিজেদের ঈদের খুশি অন্যদের জন্য পরিত্যাগ করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ঠ সকলকে ধন্যবাদ জানান।
একশপ এর ই-কমার্স হেড রেজওয়ানুল হক জামি বলেন, আমাদের এসক্রো এবং কাস্টমার কেয়ার সার্বক্ষনিক প্রতিটি বিষয় নজরদারী করেছে। আমরা এসক্রো সুবিধা রেখেছিলাম এবং সেটি পরীক্ষামূলক সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রচুর প্রবাসীও এই ডিজিটাল হাট থেকে গরু কেনার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন। এবারো প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের যুক্ত করা হয়েছে।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ই-ক্যাবের উদ্যোগে পর পর ৩ বার এই ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন হচ্ছে। গত ২ বছর সরকারের ৪ জন মন্ত্রী এই হাট থেকে পশু কিনেছেন। এই ধরনের জীবন্ত প্রাণী এবং উচ্চমূল্যের এ ধরনের সার্বজনীন ডিজিটাল প্লাটফর্ম বিশ্বে খুব বিরল। আমরা আশা করছি এবারো কার্যক্রম সফল হবে।
চলতি বছর ডিজিটাল হাটে কেন্দ্রীয় হাটের সাথে জেলা উপজেলা পর্যায়ের হাটগুলোকে যুক্ত করা হয়েছে। দুইভাবে ক্রেতারা পশু কিনতে পারবেন। প্রথম বিক্রেতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে পশু ক্রয় করতে পারবেন আবার চাইলে এসক্রো’র মাধ্যমেও ক্রয় করতে পারবেন। ঢাকার ক্রেতাদের জন্য রয়েছে স্লটারিং সুবিধা।