ওয়েলকাম টু স্মার্টভার্স স্লোগানকে সামনে রেখে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বেসিস আয়োজিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩’। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হবে। এবারের প্রদর্শনী রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্টিত হবে।
এবারের বেসিস সফটএক্সপো সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে রবিবার রাজধানীর বনানীস্থ শেরাটন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩ এর আহ্বায়ক ও বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান এবং এবারের বেসিস সফটএক্সপোর প্ল্যাটিনাম স্পন্সর আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব ইন্টারন্যাশনাল ডিভিশন সৈয়দ মনসুর মোস্তফা।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা জানান, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় বেসিস সফটএক্সপোর উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এছাড়া সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, “এবারের বেসিস সফটএক্সপো দেশের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী। সম্পূর্ণ বেসরকারি খাতের উদ্যোগে এমন বৃহৎ পরিসরে কোনো তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী এর আগে অনুষ্ঠিত হয়নি। আমাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তুলে ধরা। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রণী ভূমিকাতেই ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্ঠা সজীব ওয়াজেদ জয়ের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তর করা। এক্ষেত্রে একমাত্র শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে বেসিসই পারবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে।”
তিনি আরও বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নিরলস অবদানের কারণেই। আমাদের শুরুটা হয়েছিলো কম্পিউটার চেনানোর মধ্য দিয়ে। তারপর ২০০৩ থেকে বেসিস শুরু করে বেসিস সফটএক্সপো। এটা এখন দেশের সর্ববৃহৎ ডিজিটাল টেকনোলজি এক্সপো। বেসিস বিভিন্ন দেশে ব্যবসা ত্বরান্বিত করার লক্ষে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পাদন করে আসছে। বরাবরের মতো এবারের প্রদর্শনীতেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর বিটুবি ম্যাচ ম্যাকিং অনুষ্ঠিত হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, এই আয়োজনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তিতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবেন। যার মাধ্যমে আমরা সরকারের ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও এগিয়ে যাবো এবং ধারাবাহিকভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অগ্রসর হবো।”
বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩-এর আহ্বায়ক ও বেসিসের সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান এবারের প্রদর্শনীর বিষয়ে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, “বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, মেটার্ভার্সসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যেই অগ্রযাত্রা চলমান সেই যাত্রায় বাংলাদেশকেও এগিয়ে নিতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের মেলার স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ওয়েলকাম টু দ্য স্মার্টভার্স’। এবারের আয়োজনে ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিজনেস লিডারস মিট ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আট শতাধিক পদস্থ কর্মকর্তা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অ্যাম্বেসেডর নাইট, মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল ও চাকরির খোঁজ দিতে আইটি জব ফেয়ার এবং ক্যারিয়ার ক্যাম্প, বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশন, ফ্রিল্যান্সিং কনফারেন্স, স্টার্টআপ কনফারেন্স, ডেভেলপার্স কনফারেন্স, উইমেন ইন আইটি প্রোগ্রাম, জাপান ডে’সহ নানা আয়োজন থাকছে। এছাড়াও বেসিস সফটএক্সপোতে অনুষ্ঠিত হবে অন্তত ২০টি সেমিনার ও প্রযুক্তি অধিবেশন। যেখানে সংশ্লিষ্ট খাতের সরকারি বেসরকারি নেতৃবৃন্দ আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এবারের বেসিস সফটএক্সপোর প্ল্যাটিনাম স্পন্সর আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব ইন্টারন্যাশনাল ডিভিশন সৈয়দ মনসুর মোস্তফা বলেন, ব্যাংকিং প্রযুক্তি উন্নয়নসহ দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে বেসিস। এক্ষেত্রে বেসিস সফটএক্সপোর সাথে অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা আরও জানান, সফটএক্সপো উপলক্ষে ইতিমধ্যেই দেশের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে সহজেই বেসিস সফটএক্সপোতে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য থাকছে বিশেষ শাটল বাস সেবা। এছাড়া থাকছে গেমিং জোন, বিজনেস লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট ও কনসার্ট।
সফটএক্সপোতে সরকারি বেসরকারি নীতি নির্ধারক, প্রায় ২০০ জন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বক্তা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীবৃন্দ, বিদেশী প্রতিনিধি দল, দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারী এবং আগ্রহী তরুণ-তরুণীসহ ৩ লক্ষাধিক দর্শণার্থী পরিদর্শন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এবারের বেসিস সফটএক্সপোর প্ল্যাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে হুয়াওয়ে। সিলভার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রবি, পাঠাও এবং ফাইবার অ্যাট হোম। এছাড়া ফাইভজি পার্টনার হিসেবে রয়েছে গ্রামীণফোন। আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত এবারের বেসিস সফটএক্সপোর পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে বিকাশ, ইন্টারনেট পার্টনার হিসেবে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড এবং অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে রয়েছে দারাজ, বিডিজবস ডটকম ও ই-কুরিয়ার।
এবারের বেসিস সফটএক্সপো প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগ্রহীরা বেসিস সফটএক্সপোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (https://softexpo.com.bd/) থেকে বিনামূল্যে নিবন্ধন করে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে পারবেন।
একনজরে বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩
★ তারিখ: ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
★ সময়সূচি: প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা
★ স্থান: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র, পূর্বাচল
যা যা থাকছে
* ২০৪টি দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের স্টল/প্যাভিলিয়ন।
* ২০০ জনেরও বেশি দেশি-বিদেশি তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণ।
* ২০টি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক সেমিনার।
* ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যাম্প।
* ৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রদর্শনী।
* ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রোবট প্রদর্শনী।
* বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং সম্মেলন।
* অ্যাম্বাসেডর নাইট, মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স, উইমেন ইন আইটি প্রোগ্রাম
* স্টার্টআপ কনফারেন্সে উপস্থিত থাকবেন ভারতপের প্রতিষ্ঠাতা ও শার্ক ট্যাঙ্ক খ্যাত অশনীর গ্রোভার।
* ডেভেলপার্স কনফারেন্স ও জাপান ডে।
* গেমিং জোন, বিজনেস লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট এবং মিডিয়া কর্ণার।
* ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশন।
* আট শতাধিক পদস্থ কর্মকর্তার অংশগ্রহণে বিজনেস লিডারস মিট।
* দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধায় বিশেষ শাটল বাস সার্ভিস।
* প্রতিদিন থাকছে কনসার্ট।