বই!
রুটি -মদ ফুরিয়ে যাবে
প্রিয়ার কালো চোখও ঘোলাটে হয়ে আসবে
বইখানা রবে অনন্ত যৌবনা, যদি হয় তেমন একখানা বই।
ই-কমার্সের আলাপে সাহিত্য কেন আবার? তার আগে বলি আমাজনের নাম তো শুনেছেন! এদের যাত্রাটা তো বই দিয়েই ছিলো। ঘুরিয়ে যদি বলি, বইয়ের সে ব্যবসা আজ দুনিয়ায় নাম্বার ওয়ান ভেঞ্চার।
বাটারফ্লাই ইফেক্ট আছে না। দুনিয়ার কোথাও একটা ঘটনা ঘটলে তার আঁচ অন্য কোণায়ও লাগে। একটু দেরীতে হলেও। মার্কিন মুল্লুকের আমাজন যেমন, আমাদের তেমন রকমারী। গাঁও-গেরামে কয় ভ্যারাইটিজ ষ্টোর। রকমারী ডিজিটাল বই ভ্যারাইটিজ ষ্টোর আর কি।
অনন্ত যৌবনা বই, আর তার ‘রকমারী ‘ সমাধান। আসলে রকমারী নিজেও অনন্ত যৌবনা। এই দেশে বই পড়ার চিত্রটা কেমন জানেন? এক মহিলা গেলেন গিফট কিনতে। পতিদেবের জন্মদিন। এটা দেখেন, ওটা দেখেন মনে ধরে না কিছুই। শেষে সেলসম্যান বললেন, একটা বই নিয়ে যান ম্যাডাম। ম্যাডাম বিরস বদনে কহেন, বই? সে ও তো আছে ওর একটা!
এই হলো অবস্থা। বাঙালির কাছে এই রবি ঠাকুর, নজরুল, বিভূতি -তারাশংকররা থাকার পরেও বই পড়া একটা বিলাসিতা। অবস্থা বদলেছে, বদলাচ্ছে। কোভিডের কারণে এবার প্রাণের বইমেলা ভেস্তে গেলেও পাঠকরা রকমারীতে আস্থা খুঁজেন। ব্যবসায়িক পরিভাষায়, এই কাজটা কিন্তু একটা সলিউশন। স্টার্টআপের সার্থকতা এখানে নিহিত অনেকটা। আপনি ভ্যালু তো এড করবেনই, একটা সমস্যার সমাধানও নিয়ে আসবেন।
বাঙালি বই পড়ছে কিছুটা হলেও এবং সেটা শুধু বইমেলা কেন্দ্র করে নয় কেবল। রকমারীর মত প্লাটফর্ম সে সুযোগ করে দিচ্ছে। আপনার আপত্তি থাকতে পারে, রকমারী তে পিউর বই তো বেস্টসেলার হচ্ছে না। হ্যাঁ, আপত্তি তুলতে পারেন। তবে পাঠক তৈরীর কাজ রকমারীর নয়। কাল যদি পাঠক রবি ঠাকুরের ঘরে-বাইরে অর্ডার করে হিটলিস্টে নিয়ে আসে তাহলে বেস্টসেলার ঐটাই হবে। দোষটা অন্য কোথাও ; সে আলাপ অন্য দিন হবে।
এই যে, অন্যরকম ওয়েব সার্ভিসের রকমারী, তার যাত্রাটা কবে? খুব বেশী না, ২০১২ তে। মাত্র ১০০ বইয়ে যাত্রা। আর এখন বই-ই স্টক থাকে দেড় লক্ষাধিক! বছরে বই বিক্রি করে দশ লাখ। ভাবেন তো, দশলাখ বই কারা পড়ে? ধরুন, একজন দশটি বই কিনে গড়ে। তাহলে একলাখ ক্রেতা তথা পাঠক। এখন, আপনি তর্ক করতে পারেন সবাই তো আর পিউর বই পাঠক নন। সে তর্ক যেমন যুক্তিযুক্ত তেমনি এটাও অস্বীকারের সুযোগ নেই রকমারী ৮ বছরে বটবৃক্ষে রূপ নিয়েছে।
১০০ বই থেকে দশলাখ, এরপর বই থেকে আরো বিবিধ সার্ভিস। রকমারী পেরিয়েছে বহু পথ। দেখিয়েছে দিশাও। দেশে এখন বই রিলেটেড স্বতন্ত্র স্টার্টআপই আছে অনেক। কেউ ডিজিটাল পাবলিকেশনে, কেউ রকমারীকে কপি করে, কেউ বা একটু ঘষে মেজে ভিন্ন মোড়কে।
একটা কথা আছে, কেউ আপনাকে অনুকরন না করলে আপনি ঠিক অতটাও সফল নন। রকমারীর সফলতা এখানেও প্রতীয়মান। দেদারসে অণুকরণ হচ্ছে, তবে দিনশেষে দেশীয় উদ্যোগেরই প্রসার ঘটছে বলেই মনে করছেন রকমারী পর্ষদ।
৮ বছর চোখের পলকেই চলে যায়। আর পরিবর্তনটা চোখ দিয়ে দেখিয়ে যায়। রকমারীর ক্ষেত্রে সেটা আপাতদৃষ্টিতে ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম ‘ মনে হলেও আসলে তা কিন্তু নয়। অজস্র বিনিদ্র রজনী আর একখানা রকমারী। সাথে লালিত স্বপ্ন। রকমারী নিয়ে আপনারা বহু পড়েছেন, জানেনও অনেককিছু। তবে ই-কমার্স বার্তার উদ্দেশ্য কেবলই একটা। রকমারীর ট্রেন্ড সেটিংয়ের দিকটাও দেখানো।
বই না পড়ুয়ারা বছরে দশলাখ বই কিনছে এক রকমারী থেকেই। সফলতার এর চেয়ে বড় সংজ্ঞা আর কি হতে পারে!
একশ বই দেড়লাখে পৌঁছেছে, দশলাখ বিক্রি হয়তো কোটি ছুঁয়ে ফেলবে। শুরুর একশ বইয়ের মত একশ বছর স্বমহিমায় থাকুক রকমারী। স্বপ্ন ডানা মেলুক আরো। উদ্ভাবনে আর অণুকরণে আরো শাণিত হোক। মেড ইন বাংলাদেশ নয় কেবল, happened in Bangladesh পরিচয়ে পরিচিত হোক বাংলার ‘আমাজন ‘ রকমারী।