আলীবাবা ও চল্লিশ চোর! দারাজের ক্ষেত্রে বিষয়টা এমন, ‘ দারাজ ও লাখ লাখ পণ্য ‘। আলীবাবার কথা কেন? কারণ, দারাজ তো আলীবাবারই। আলীবাবার মত চল্লিশ চোরের কাহিনি না থাকলেও আছে লাখো পণ্য, সেলার ও কোটির উপরে সন্তুষ্ট ক্রেতা -ভোক্তা।
বেশীদিন তো না! এই ২০১৫ তে দারাজ বাংলাদেশে তাবু গাড়ে। মুলত, পাকিস্তান থেকে এর যাত্রা। রকেট ইন্টারনেট নামে এক প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে।এখন, মোটামুটি সাউথ এশিয়ায় পরিচিত একটা নাম। আর বাংলাদেশে সম্ভবত ( তর্কসাপেক্ষে) নাম্বার ওয়ান ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস।
স্কোয়াড লিডার শামীমকে প্রায়ই ইউটিউব এডে দেখা যায়, দারাজে আছে ‘লাখ লাখ ‘ পণ্য এই বুলিটা আওড়াতে। কথা একদম ধ্রুব সত্য।
এদেশীয় আরেক ই-কমার্স কাইমুকে কিনে নিয়েছিলো দারাজ। পরে আবার দারাজ যায় আলীবাবার ছত্রছায়ায়।
একটু ভালো করে দেখলেই বুঝা যায়, দারাজ আর আলীবাবার প্রায় একই মডেল। দুটোই যে মার্কেটপ্লেস এবং লজিস্টিক প্রোভাইডার। আলীবাবার এদেশে যাত্রা মুলত দারাজের হাত ধরেই। গ্লোবালি আলীবাবা হয়তো জায়ান্ট, কিন্তু বাংলাদেশে সম্ভবত আলীবাবা একক ভাবে আসলে দারাজকে কম্পিটিটর হিসেবে নিতে হতো। কথায় বলে না, এমন কিছু দেখাও তোমার প্রতিযোগী যেন তোমার অংশীদার হয়। দারাজ সেটা ভালোমতো দেখিয়েছে।
সাকসেস ফান্ডাটা কি তবে? ঐ যে বলে না, কাস্টমার ভাগবান হোতা হ্যায়! দারাজ সেদিকটা বেশ ভালোই নজরে রেখেছিলো। ক্রেতা সন্তুষ্টি না থাকা যে কোন ব্যবসার জন্য ঝুঁকির বিষয়। তার উপর দারাজ একটা মার্কেটপ্লেস। তাই ওদের ফোকাস মুলত সাপ্লাই লজিস্টিকে বেশী ছিলো বা আছে। পরের ধনে পোদ্দারি করলেও জবানদিহিতার জায়গায় ছাড় নয়। আর ওতেই নিশ্চিত হয়েছে সফলতা।
দারাজ ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ে বাংলাদেশের প্রাতজন বললে ভুল হবে না। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এখন পুরো দুনিয়ায় রাজ করছে। দারাজ সেই ট্রেন্ড এদেশে বেশ ভালোই করে দেখাচ্ছে বলতে গেলে। আপনি একটা ওয়েস্টার্ন বিজনেস মডেল যখন এদেশে আনবেন, লক্ষ্য রাখতে হবে তার আনুষঙ্গিক বিষয়াদিও আসতে হবে। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং যেমন এসেছে, তেমনি ক্যাম্পেইন মার্কেটিংও এদের হাত দিয়েই গতি পেয়েছে। ১১.১১, ব্ল্যাক ফ্রাইডে – বাংগাল মুলুকে এগুলোও আজ ওয়ার্ড অব মাউথ। বলা হয়, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং পুরো দুনিয়ায় এখন প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকার বেশী বাজার তৈরী করেছে।
এক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কি করলো দেখেন কিছুদিন আগে। তাই, দারাজ যখন সেলিব্রিটি দিয়ে প্রমোশন চালায় তখন আপনার কাছে তা কেবলই ‘একটা প্রমোশনাল এক্টিভিটি ‘ হলেও, আসলে তা কিন্তু দেশের ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং নামে একটি ভিন্ন জগতই তৈরী করে দিচ্ছে আসলে। ২০২৫ সাল আসতে দিন, দারাজকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারবেন না।
শুধু এসব বলে দারাজকে ধন্যবাদ দিবেন তা কিন্তু নয়। এই যে ‘ লাখ লাখ ‘ পণ্যের অনন্য ইনভেন্টরি, এর জন্যও দিতে হয় বৈকী। দারাজের সুবাদে কত মানুষের ডিজিটাল স্টোর দাঁড়িয়েছে এবং এই করোনাকালে কেবল দারাজের কারণে দারাজ গলায় কত ব্যবসা যে টিকে রয়েছে তা বলার মত নয়।
দারাজের স্টেকহোল্ডার জানেন কত? দারাজেরস্টেকহোল্ডার নিয়ে কোন দেশ হলে সে দেশ ৫০ এর ভিতরেই থাকবে। আর পুরো সাউথ এশিয়ায় গ্রাহকসংখ্যা গনণায় নিলে? চোখ বুঝে ভাবুন, ‘ দারাজ একটি দেশের নাম ‘। দারাজ আসলে একটি বিপ্লবেরও নাম। একটি আশার নাম, একটি মাইলফলকের নাম। একটি ‘ ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং ‘ ব্র্যান্ডেরও নাম। একটি ‘ কিছু করে দেখানোর ‘ নাম। বক্ররেখায় এক চিলতে সরলতার নাম দারাজ।
দারাজ আরো বহুদূর যাবে। বহু ইনোভেশন আনবে। বহু বক্ররেখার চক্র কাটবে। বহু কর্মসংস্থান করবে। দেশে আরো বহু বিদেশী ফিউশন আনবে, হয়তো দেশকে বিদেশে রিপ্রেজেন্টও করবে। করাটা শুরুও হয়েছে। হয়তো বিদেশে ক্যাম্পেইন হবে তখন বাংলাদেশের কোন বিশেষ দিন নিয়ে। হয়তো বিদেশী কোন ইনফ্লুয়েন্সার বলবেন আপনার ইউটিউব ফিডে এসে, ‘দারাজে আছে লাখ লাখ মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য ‘।