শুরুতেই আপনার সম্পর্কে কিছু জানতে চাই?
আসসালামু আলাইকুম, আমি রাবেয়া খাতুন লাকি। আমার জন্মস্থান ঢাকাতে। ঢাকাতেই বেড়ে উঠা আমার। পেশায় একজন উদ্দোক্তা।
আপনার শৈশবকাল কেমন ছিল?
যৌথ ফ্যামেলিতে বেড়ে উঠা আমার।শৈশবকাল আমার অনেক অনেক ভালো কেটেছে। শৈশবে আমি পড়াশুনা, খেলাধুলা, আবৃত্তি, নাচ আমার যা যা ইচ্ছা ছিল সবই আমি পূরণ করতে পেরেছি। পরিবার থেকে আমার এসব বিষয়ে কখনো কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি।
ছোটবেলা থেকে আপনার স্বপ্ন কি ছিল?সেই স্বপ্ন পূরণে কিভাবে নিজেকে তৈরী করেছেন? ছোটবেলায় যে এবং যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটার সাথে বর্তমান উদ্দোক্তা হবার মিল কতটুকু?
ছোট থেকে চেয়েছি আমার নিজের একটা পরিচয় হবে, যেখানে সবাই আমাকে চিনবে আমার কাজের মাধ্যমে।
প্রথমে আমি যেভাবে চিন্তা করেছিলাম যদিও সেভাবে আমার কার্যকর হয়নি তবুও যে স্বপ্ন আমি দেখেছি আমার কাজে মানুষ আমাকে চিনবে আমি নিজেকে তৈরী করেছি, অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে। শৈশবে যে স্বপ্ন গুলো দেখেছিলাম সেই স্বপ্নের সাথে কিছুটা অমিল আছে আমার বর্তমান অবস্থান এর। কিন্তু সম্পূর্ণ যে অপরিবর্তিত এমনও নয়। আমি সবসময় চেয়েছি আমার পরিচয় এ আমাকে সবাই চিনবে, উদ্দোক্তা হিসাবে নিজেকে পরিচিত করতে পারবো যেখানে সবাই আমাকে আমার কাজের মাধ্যমে চিনবে। শৈশবে আমরা অনেকে অনেক ভাবে স্বপ্ন দেখি, সব স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও স্বপ্নকে মনে রেখে সেই স্বপ্নের মত অন্য কিছু কে আমরা উপস্থাপন করতে পারি নিজের ইচ্ছার কথা চিন্তা করে।
চাকুরী না করে উদ্দোক্তা হলেন কেন?
চাকুরী না করে উদ্দোক্তা হবার পিছনে আসলে ছোটবেলার সেই স্বপ্ন, যে আমাকে সবাই আমার পরিচয়ে চিনবে।
চাকুরীও আমি করেছি আমি আসলে কোনো কাজকে ছোটো করে বলবোনা, সবারই নিজস্ব চিন্তা,স্বপ্ন থাকে। চাকুরী করলে আসলে আমি আমার যে স্বপ্ন ছিল নিজের নামে পরিচিত হবো সেই স্বপ্ন পূরণ হতো না।
একজন উদ্দোক্তা তার কাজের মাধ্যমে পরিচিত হতে পারে। আমার কাজ সবদিকে ছড়িয়ে পড়ুক আমাকে সবাই আমার কাজের মাধ্যমে চিনুক এজন্য আমার উদ্দোক্তা হয়ে ওঠা।
আপনার সফলতার মূল অনুপ্রেরণা কি ছিলো, এই সফলতার স্পর্শ করতে কোন ব্যর্থতা/ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো কি? সেই ব্যর্থতা/ বাধা টপকে আসার জন্য কিভাবে কাজ করেছেন?
আসলে সফলতা বলবো কিনা জানিনা, তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আমার উদ্যোক্তা জীবনের মূল অনুপ্রেরণা ছিল আমার নিজের এবং নিজের কাজের প্রতি বিশ্বাস।
তবে এ পর্যন্ত আসতে আমার পরিবারের অনেক সহযোগিতা ছিল। প্রায় ১যুগ চেষ্টায় আজকে এই জায়গায় আমি এসেছি আলহামদুলিল্লাহ্।
এই জায়গা স্পর্শ করতে অবশ্যই আমাকে অনেক ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি যখন কাজ করতে এসেছি তখনকার সময় এখনকার অনলাইনে বিজনেস নিয়ে এতো কিছু জানতে পারতাম না বা প্রচার করতে পারতাম না।
সে ক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি এবং পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক বাধাও এসেছে যার কারণে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।
তবে ব্যর্থতা বলবোনা আমি কারণ আমি মনে করি আমার এতটুকু আসা পর্যন্ত আমি আসলে ব্যর্থ হয়নি। যে কোনো কাজে ভালো মন্দ আছে।
হ্যা আমার কাজে অনেক বাধা এসেছে। আমি কখনো হাল ছেড়ে দেইনি। আমি মনে করি সব উদ্দোক্তাদের উচিৎ নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা।
আমার নিজের প্রতি বিশ্বাসই আমাকে কোনো বাধা আমাকে আমার কাজে আটকাতে পারেনি। যে সব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি তা ওভারকাম করতে পেরেছি।
আর বাধা টপকে আসার জন্য কিভাবে কাজ করেছি, আসলে ঐ যে নিজের প্রতি বিশ্বাস, সততা, কঠোর পরিশ্রম ছিল যার কারণে সবরকম বাধা আমি টপকাতে পেরেছি।
ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার পণ্য বা সেবা কিভাবে ব্যবহাট হতে পারে? অথাবা আপনার পণ্য কিভাবে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিচ্ছে?
আমার প্রতিষ্ঠান যে পণ্য নিয়ে কাজ করে সেখানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলাচলের জন্য যে জিনিসগুলো দরকার সেগুলো নিয়ে কাজ করছে।
আসলে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের একটি কোম্পানি দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মিটাতে আমাদের নিজেদের পোষাক নিয়ে কাজ করছে এবং ইভেন্ট কোম্পানি নতুন এবং পুরাতন উদ্যোক্তাদের কর্ম সহযোগিতা করে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিচ্ছে।
দশ বছর পর নিজেকে এবং ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে কোথায় দেখতে চান?
দশ বছর পর নিজেকে এবং ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে আমি এমন জায়গায় দেখতে চাই যেখানে কিনা শুধু আমাদের দেশে না দেশের বাহিরেও আমার নাম আমার প্রতিষ্ঠান এর নাম সবার মুখে মুখে থাকুবে এবং আমার যে স্বপ্ন ছিল আমাকে আমার নামে চিনবে সবাই আগামী দশ বছর পর যেনো লাকী বললে সবার কাছে আমার ফেইস মনে পরে আচ্ছা লাকী মানে এই লাকী এভাবে দশ বছর পর নিজেকে পরিচিত করতে চাই এবং ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে যেনো দশ বছর পর এমন জায়গায় পৌঁছে যেতে পারি যেন আমাদের মতো উদ্দোক্তা যারা আছে তারা নিজেদের কাজ এবং নিজেদের পরিচয় এর বিকাশ ঘটাতে পারে।
আপনার প্রতিষ্ঠানটি নতুনদের কর্মসংস্থান করতে কেমন ভূমিকা রাখছে?
আলহামদুলিল্লাহ নতুনদের কর্মসংস্থান করতে বিগত বছরে এবং এখনো নতুন কর্মজীবীদের নিয়ে কাজ করেছে।
যারা কি না স্টুডেন্ট লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা পার্ট টাইম জব করতে পারে। এরকম সুযোগসুবিধা আমার প্রতিষ্ঠানে আছে।
অনলাইন অফলাইন দুইভাবে কাজ করছে বর্তমানে এবং সেই সাথে আমার যে প্রতিষ্ঠান থেকে কারখানা ওপেন হয়েছে সেখানে ৭জন কর্মী কাজ করছে এবং আমাদের ইভেন্ট অরগানাইজেশন থেকে লাস্ট আমরা মেহেদী ফেস্ট করেছি সেখানে আমাদের কিছু টিম কাজ করেছি এবং সবসময় আমাদের প্রতিষ্ঠানে এড থাকবে এই টিমের প্রায় ১৩ জনের সদস্য।এছাড়া অনলাইনে আমাদের যে ফেসবুক পেজ আছে মডারেশনের জন্য আমাদের টিম আছে ৫ জন। সবমিলিয়ে আমি এখন ২৫ জন কর্মী নিয়ে কাজ করছি। তারা আমার কর্মসংস্থানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
নতুনদের কর্মসংস্থানে আমি চাই যারা স্টুডেন্ট আছে তারা আমার সাথে সংযুক্ত হোক। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ করে দিতে চাই তাদের জন্য।
যতটুকু আমি শিখেছি বা এখনো শিখছি তাদের সাথে শেয়ার করে তাদের নিয়ে কাজ করতে চাই।
অন্যদের তুলনায় আপনি বা আপনার উদ্যোগ বা আপনার পণ্য ব্যতিক্রম এ কোন ক্ষেত্রে?
অবশ্যই বলবো অন্যদের ক্ষেত্রে আমার উদ্যোগ বা আমার পণ্য ব্যতিক্রম কারণ আমি যেটা মনে করি যে আমরা যে কোনো কাজই করি না কেনো বা যে কোনো উদ্যোগই নিই না কেনো সেটা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের করা উচিৎ। এজন্যে সব কাজে এবং উদ্যোগে আমি চেষ্টা করি আমার প্রতিষ্ঠান যা আছে আর আমি যা নিয়ে কাজ করি না কেনো আমি চেষ্টা করি একটু ব্যতিক্রমভাবে পুরনো কাজেই নতুনের ছোঁয়া দিতে।
এখনকার যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পূরানো জিনিস কে নতুন ভাবে উপস্থাপন করা।
সেটা আমার ইভেন্ট হোক আমার ক্লোদিং হোক বা আমার ড্যান্স একাডেমির হোক। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি চেষ্টা করি ব্যতিক্রম ভাবে পূরানো জিনিসকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা।
আর নিজের কথা যদি বলি আমি একেবারে সাধারণ একজন মানুষ। ব্যতিক্রম বলবোনা আমি একদম সাধারণ ভাবে চলতে পছন্দ করি নিজেকে সাধারণভাবে উপস্থাপন করি।
একজন উদ্দোক্তা হিসাবে আপনি অন্য কোনো সংগঠনে জড়িত আছেন কি না?থাকলে আপনার ভূমিকা কি?
হ্যা আমি মনে করে একজন উদ্দোক্তার জন্য নেটওয়ার্কিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সেই জন্য সব উদ্দোক্তাকে একটি নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্ম এ যুক্ত থাকা দরকার। আমিও যুক্ত আছি একটা নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্মে অন্ট্রাপ্রেনিওরস ক্লাব অব বাংলাদেশ যেটি সরকার অনুমদিতএকটি ক্লাব।
সেখানে আমি এক্সিকিউটিভ কমিটিতে পি.আর সেক্রেটারী হিসেবে আছি এবং ফাউন্ডার মেম্বার হিসাবে আছি।
সেই সংগঠন উদ্যোক্তা এবং ই-কমার্স সেই সংগঠন ই কমার্স ব্যবসা প্রচার ও প্রসারে কি ধরনের ভূমিকা
রাখছে?
অন্ট্রাপ্রেনিওরস ক্লাব অব বাংলাদেশ ই-কমার্স ও উদ্দোক্তাদের জন্য একটি নেটওয়ার্ককিং প্লাটফর্ম।
আসলে কাজের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং খুব বেশি দরকার।
প্রচার ও প্রসারের ভূমিকা অন্ট্রাপ্রেনিওরস ক্লাব এমন ভাবে রাখে যে আজকে আমি এখানে যে এসেছি এই জন্য অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাবো অন্ট্রাপ্রেনিওরস ক্লাব কে। আমি যে সংগঠনে আছি এই সংগঠনের মাধ্যমে আমি আমার কাজ এবং নিজের পরিচিতি বাড়াতে পেরেছি।
অন্ট্রাপ্রেনিওরস ক্লাব ই-কমার্স ব্যবসার জন্য অনুকূল নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে ডেটা গোপনীয়তা, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট। অন্ট্রাপ্রেনিওরস ক্লাব ই-কমার্স ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা এবং বিভিন্ন স্টোকহোল্ডারদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য ও সেবা বাজারে জানাতে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে, যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন বিজ্ঞাপন, এবং ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং।
অন্ট্রাপ্রেনিওরস ক্লাব নিজস্ব গ্রুপ এবং পেজ এর মাধ্যমে উদ্দোক্তাদের পণ্য ও সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
অন্ট্রাপ্রেনিওরস ক্লাব অব বাংলাদেশের রয়েছে হট লাইন নাম্বার যার মাধ্যমে উদ্দোক্তারা যে কোনো প্রয়োজনে সুবিধা গ্রহণ করছে।যার মাধ্যমে একজন উদ্দোক্তা প্রচার এবং প্রসার দুই কাজই সম্পূর্ণ করতে পারছে।