কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে সৃষ্ট ভুল তথ্য বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সর্বশেষ গ্লোবাল রিস্কস প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে চাটজিপিটিসহ অন্যান্য এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে বর্তমানে ঝুঁকি আরো বেড়েছে। খবর এপি।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের আগে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে দাভোসের সম্মেলনে এআই খাতের পক্ষ থেকে ওপেনএআই সিইও স্যাম আল্টম্যান, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা ও মেটার প্রধান এআই বিজ্ঞানী ইয়ান লেকুন উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রায় ১ হাজার ৫০০ এআই বিশেষজ্ঞ,শিল্প নেতা ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে করা জরিপের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আধুনিক এআইয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট বিভ্রান্তিকর, ভুল ও মিথ্যা তথ্য গণতন্ত্র ধ্বংসকারী হতে পারে। এআইভিত্তিক বানোয়াট কনটেন্ট সাধারণ মানুষকে ম্যানিপুলেট করতে সক্ষম। আরো উদ্বেগের বিষয় হলো এআইয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট এসব ভুল, মিথ্যা বা বানোয়াট তথ্য আগামীতে সামাজিক বিভক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি মার্শের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট লিডার ক্যারোলিনা ক্লিন্ট বলেছেন, ‘ডিপফেক করার জন্য এবং বড় গ্রুপগুলোকে প্রভাবিত করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হতে পারে, যা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। ভুয়া, মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য নির্বাচিত সরকারগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।’
ক্যারোলিনা ক্লিন্ট আরো জানিয়েছেন, এআইভিত্তিক প্রযুক্তির উত্থানের ফলে যে কেউ শক্তিশালী ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে খুব সহজে ব্যাপক পরিসরে সাইবার আক্রমণ চালাতে পারে, যা ইন্টারনেট জগতে নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। এছাড়া ইন্টারনেট থেকে মুছে ফেলা তথ্য সংগ্রহ করে পুনরায় সেগুলো প্রকাশ করে পক্ষপাতমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এআই সিস্টেম। ফলে কোনো এআই মডেলের মাধ্যমে পক্ষপাতমূলক পরিস্থিতি তৈরি হলে তা নিয়ন্ত্রণ বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে।
প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনকে দ্বিতীয় বৈশ্বিক ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চরম বৈরী আবহাওয়া আগামী দশকে দীর্ঘমেয়াদি হুমকিতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য পরিবেশ সম্পর্কিত ঝুঁকি যেমন পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে প্রতিবেদনে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি এআই-সৃষ্ট ভুল তথ্যের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমি ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।