উওর: আসসালামু আলাইকুম ,আমি তানজিলা তুলি ফাউন্ডার এবং ডিজাইনার সালমা বুটিকস্। ২০০৮ থেকে ২০২৪ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সফলতার সাথে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করে আসছি। আমাদের পোশাকের মূল আকর্ষণ হল বাংলাদেশের ঐতিহ্য হাতের কাজ ধরে রাখা। পাশাপাশি বাটিক, ডাই এবং ব্লক নিয়ে কাজ করি।
আপনার শৈশবকাল কেমন ছিলো?
উওর: শৈশবকাল এর কথা মনে করে যদি কোনো কথা বলি তাহলে আমার দুটো ক্যারেক্টার ভেসে ওঠে। আমার বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন। আমার ঠিক তেমন মনে নেই, তবে আমার ক্যারেক্টার দুটোর কথা মনে আছে যেমন একটা ছিলো আমি খুব দুষ্ট ছিলাম সবসময় গাছ উঠা, দেয়ালের উপর দিয়ে হেঁটে বেড়ানো, অনেক বেশি খেলাধুলা করা,পড়ালেখায় ফাঁকি দেওয়া। এবং আরেকটা দিক ছিলো আমি শৈশবকাল থেকে সেল্ফডিপেনডেন্ট ছিলাম মানে আমাকে একটা কাজ বা কিছু করতে হবে।
ছোটবেলা থেকে আপনার স্বপ্ন কি ছিল? সেই স্বপ্ন পূরণে কিভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন? ছোট বেলায় যে এবং যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটার সাথে বর্তমান উদ্যোক্তা হবার মিল কতটুকু?
উওর: ছোটবেলা থেকে আমার যেটা স্বপ্ন ছিল স্বপ্নটা হলো আমাকে কারো মেয়ে, বোন, অথবা কারো ওয়াইফ হিসাবে না আমাকে আমার নামে চিনবে। আমি যেখানে কাজ করবো বা চলাফেরা করবো সেখানে আমার নিজের একটা পরিচয় থাকবে। আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য বেষ্ট ওয়ে ছিল সেল্ফডিপেনডেন্ট। এবং ছোট বেলায় যে স্বপ্ন দেখেছিলাম বর্তমানে আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা পুরোই মিল আছে।
চাকরি এবং উদ্যোক্তা কেন একসাথে হলেন, এবং দুটোর মধ্যে কোনটা বেস্ট?
উওর: চাকরি এবং উদ্যোক্তা কেন একসাথে হলাম। আমার প্রথম কর্ম ছিল চাকরি এবং আমি অনেক ডিসিপ্লিন পছন্দ করি আমার কাছে মনে হয়েছে চাকরিটা উত্তম নিজের ডিসিপ্লিন রক্ষা করার জন্য পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার ও একটা কারণ আছে আমি একটু আলাদা ডিজাইন পছন্দ করি এই জন্য আমার কাছে মনে হয়েছে একমাত্র পোশাকের মাধ্যমে ডিজাইন প্রকাশ করা সম্ভব। সাথে দু একজন মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া। এবং এটা উদ্যোক্তা হওয়া ছাড়া পসিবল না। এই জন্য চাকরির পাশাপাশি আমার উদ্যোক্তা হওয়ার উদ্যোগ নেয়া ।
আপনার এই সফলতার মূল অনুপ্রেরণা কি ছিলো, এই সফলতা স্পর্শ করতে কোন ব্যর্থতা/ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো কি? সেই ব্যর্থতা / বাধা টপকে আসার জন্য কিভাবে কাজ করেছেন?
উওর: আমার সফলতা মূল অনুপ্রেরণা ছিল আমার ফ্যামিলি মেম্বাররা, আমার মা। আমি ছোটবেলায় গ্রাম এ বড় হয়েছি আমার মা আমাকে সাহস ও পারমিশন দিয়েছে একা চলার। যেখান থেকে আমি আমার নিজের পরিচয় করার সুযোগ পেয়েছি।
এই সফলতা অর্জন করার জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম এবং আমাকে এই অসুস্থ অবস্থায় দেখার মত তেমন কেউ ছিল না, কারন আমি ঢাকায় চলে দএসেছিলাম আর আমার পুরো ফ্যামিলি গ্রামে ছিল। আমি আমার পরিবারকেও আমার অসুস্থতার কথা বলিনি কারন আমি তাদেরকে বললে তারা আমাকে বাড়ি নিয়ে যেত এবং আমার লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব হয়ে যেত। আমি এই অসুস্থতা নিয়ে নিজের টেককেয়ার, জব, পড়াশোনা করেছি শুধুমাত্র নিজের মনের জোরে, আমার কাছে আমার প্রধান শক্তি হচ্ছে আমার মনের জোর।
আপনার বর্তমান সফলতার পিছনে অতীতের ব্যর্থতাগুলো কিভাবে প্রেরনা দিচ্ছে?
উওর: বর্তমান সফলতার পিছনে অতীতের ব্যর্থতা, আমি আমার অতীতকে অতীতে ফেলে এসেছি। কারন আমার অতীত এতটাই চ্যালেঞ্জের ছিল তাই আমি অতীতর কোন ব্যর্থতাকে আমার প্রেরণা হিসেবে নিতে চাই না ।
ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার পণ্য বা সেবা কিভাবে ব্যবহার হতে পারে? অথবা আপনার পণ্য কিভাবে ই কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিচ্ছে।
উওর: আমরা যারা ছোট করে ব্যবসা করছি তাদের পক্ষে সম্ভব না একটি ই-কমার্স সাইড তৈরি করা। কারণ এটাতে অনেক ধরনের খরচের ব্যাপার থাকে। তবে একটা বিজনেস পেজের মাধ্যমে সবধরনের কাজের পোস্ট করা হয় কিন্তু এটাকে প্রপার ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি বলেনা। তবে আমার প্রোডাক্ট এর যদি আমি ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিতে চাই সে ক্ষেত্রে আমি বেছে নিব বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং সাইড যেমন: আমি নিজে একটি অন্ট্রোপনাশিপ ক্লাবের সাথে আছি ই-ক্লাব সেটাকে আমি আমার ই-কমার্স সাইড হিসাবে নিতে পারি, এছাড়া দারাজ এর মত অনেক সাইড আছে যেখানে সেলার হয়ে কাজ করা যায়। এভাবেই ই কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেয়া সম্ভব।
আপনার প্রতিষ্ঠানটি নতুনদের কর্মসংস্থান করতে কেমন ভূমিকা রাখছে?
উওর: আমাদের প্রতিষ্ঠানটি নতুনদের কর্মসংস্থান করতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা নতুনদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও কাজ শেখা প্রোগ্রাম আয়োজন করি, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এড়ারা তাদেরকে ডিজিটালি কিভাবে পণ্য সেল করা যায় সেটাও শিখিয়ে থাকি।
অন্যদের তুলনায় আপনি বা আপনার উদ্যোগ বা আপনার পন্য ব্যতিক্রম এবং কোন ক্ষেত্রে?
উওর: অন্যদের তুলনায় আমার পণ্য ব্যতিক্রম হওয়ার মূল কয়েকটি কারণের মধ্যে প্রথম হলো আমি বাংলাদেশের ট্রেডিশন অর্থাৎ হাতের কাজ নিয়ে কাজ করি। আমার পণ্যের গুণগত মান ১০০% গ্যারান্টি আমি দিতে পারি সেটা কাপড় হোক বা কাপড়ের রং হোক। আমি পণ্য তৈরি এবং বিক্রির ক্ষেত্রে কাস্টমারকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এসব কারণেই আমি অন্যদের ব্যতিক্রম বলে মনে করি।
একজন উদ্যোক্তা হিসাবে আপনি অন্য কোনো সংগঠনে জড়িত আছেন কিনা? থাকলে আপনার ভূমিকা কি?
উওর: একজন উদ্যোক্তা হিসাবে আমি একটি সংগঠনের সাথে আছি যেটির নাম ই-ক্লাব। এখানে প্রথমত আমি আমার নিজের বিজনেস নেটওয়ার্কিং এর জন্য কাজ করে থাকি। পাশাপাশি আমি ই ক্লাবের একটা প্রজেক্টে প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছি। প্রজেক্টটি একটি টকশো নাম: ( গল্পের শুরু সেখানেই)। যে প্রোগ্রামের মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা তার নিজের এবং তার ব্যবসার নেটওয়ার্কিং করতে পারবে যেটাকে সেলফ ব্র্যান্ডিং বলা হয়।
সেই সংগঠন উদ্যোক্তা এবং ই-কমার্স ব্যবসা প্রচার ও প্রসারে কি ধরনের ভূমিকা রাখছে?
উওর: আমি যেই সংগঠনে আছি সেই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো তাদের যত উদ্যোক্তা আছে তাদেরকে তাদের বিজনেসের নেটওয়ার্কিং করার সুযোগ করে দেয়া। এছাড়া উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট, পণ্য মেলা, প্রশিক্ষণ, ওয়ান টু ওয়ান কাউন্সেলিং, কাজের উৎসাহ প্রদান করা এবং আরও বিভিন্ন ভাবে প্রসারের ভূমিকা পালন করে থাকে।
একজন উদ্যোক্তার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে উদ্যোক্তা ইকোসিস্টেমে কি ভূমিকা রাখা উচিত বলে আপনি মনে করেন? ই কমার্স ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
উওর: একজন উদ্যোক্তার সামাজিক দায়বদ্ধতা একটি টেকসই এবং নৈতিক ব্যবসার পরিবেশ গড়ে তোলা বলে আমি মনে করি। যেমন: কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি ইনিশিয়েটিভস, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মতো বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবেলা করার মত ভূমিকা পালন করতে পারে।
ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আমার ভাবনা যদি বলি ই-কমার্স ফিজিক্যাল স্টোরের সাথে যুক্ত ওভারহেড খরচ কমিয়ে দেয়, ব্যবসাগুলোকে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য প্রদান করতে এবং লাভের মার্জিন উন্নত করতে দেয়।ই-কমার্সের ডিজিটাল প্রকৃতি বিপুল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ করতে সক্ষম করে। দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ডেলিভারির প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকের প্রত্যাশা পূরণের করে থাকে।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার উপদেশ বা প্রেরণামূলক মতামত কি?
উওর: নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য যে কথাগুলো আমি বলতে চাই ১ প্যাশন দিয়ে শুরু করতে হবে এমন একটি ব্যবসার ধরন বেছে নিতে হবে যেটা তার সাথে যায় এবং তাকে অনুপ্রাণিত করবে । ২ বিজনেস প্লান করতে হবে। এর জন্য মার্কেট গবেষণা, প্রতিযোগিতা এবং গ্রাহকদের চাহিদা বুঝতে হবে। ৩ একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা যার মাধ্যমে তার নিজের ব্যবসার ব্র্যান্ডিং করতে পারবে।৪ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে সফল ব্যবসা তৈরি করার জন্য সর্বদা চেষ্টা করতে হবে। ব্যর্থতা আসলে সেটাকে ভয় না পেয়ে সেখান থেকে শিখতে হবে ও কাজে লাগাতে হবে।
একটি মন্তব্য
Nice interview