স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন বুয়েট অ্যালামনাই।
দেশ ও সমাজের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতার ঋণ শোধ করেছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী জামিলুর রেজা চৌধুরী প্রকৌশলী হলেও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ ছিল। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রাথমিক পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তরুণ প্রজন্ম জামিলুর রেজা চৌধুরীর দেখানো পথে হাঁটলেই বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (আইএবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জেআরসি স্মারক বক্তৃতা। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিরা জামিলুর রেজা চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন বুয়েট অ্যালামনাই। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর ছেলে কাশিফ রেজা চৌধুরী, বুয়েটের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রকৌশলী, স্থপতিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আয়োজনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন তৃতীয় জেআরসি স্মারক বক্তৃতা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি কাজী এম আরিফ। তিনি বলেন, এবার জামিলুর রেজা চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে এপ্রিলে এই আয়োজন করা হচ্ছে।
এরপর বড় পর্দায় দেখানো হয় আলোর পথযাত্রী শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র। প্রয়াত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে এই তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন শাকুর মজিদ।
স্বাগত বক্তব্যে বুয়েট অ্যালামনাইয়ের মহাসচিব মাহতাব উদ্দিন বলেন, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জামিলুর রেজা চৌধুরী অবদান রেখেছেন। কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে তিনি চেষ্টার ত্রুটি রাখতেন না। তাঁর দেখানো পথে চলতে পারলেই জামিলুর রেজা চৌধুরীর আত্মা শান্তি পাবে।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী
বুয়েটের উপাচার্য ও বুয়েট অ্যালামনাইয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, জামিলুর রেজা ছিলেন ‘মাস্টার অব অল’, সব বিষয়ের শিক্ষক। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি ছিলেন আন্তরিক। বাংলাদেশকে নিয়ে জামিলুর রেজা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা যেন পরবর্তী প্রজম্ম পূরণ করতে পারে৷
তৃতীয় জেআরসি স্মারক বক্তা জার্মান স্থপতি আনা হেরিংগারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. জাকিউল ইসলাম।
‘স্থাপত্য জীবনকে উন্নত করার একটি হাতিয়ার’ শীর্ষক এই স্মারক বক্তৃতা করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি আনা হেরিংগার। আনা হেরিংগার জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর আর্থেন আর্কিটেকচার, বিল্ডিং কালচারস ও সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ার। মাটি ও বাঁশের মতো উপকরণ দিয়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন আনা।
দিনে দিনে মাটির ঘরের মতো স্থাপনা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন আনা হেরিংগার। তিনি বলেন, নতুন নতুন উপকরণ ব্যবহারের ফলে নিজেদের আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলছি। মাটি ও বাঁশের মতো স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি স্থাপনা রক্ষায় কাজ করতে হবে। স্থানীয় উপকরণ, স্থানীয় মানবসম্পদ ও বৈশ্বিক জ্ঞানের মিলন হলেই প্রকৃতি রক্ষা করা যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করলে প্রকৃতি রক্ষা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তরুণদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। জামিলুর রেজা চৌধুরীর দেখানো পথে হাঁটলে তরুণেরাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারবেন।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার সাব্বির আহমেদ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। বুয়েট অ্যালামনাইয়ের ট্রাস্টি ও জেআরসি স্মারক বক্তৃতা উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সাদিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।