আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট সারা দেশে সংঘাত, সহিংসতায় আহত আরও চারজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁদের সবাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর মধ্যে একজন গতকাল শুক্রবার ভোরে, অন্য তিনজন গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন।
এ নিয়ে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৭০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। আর কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সংঘাত ও সহিংসতায় ৩৫৪ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে গত ৩২ দিনে সারা দেশে মোট ৬২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।
গতকাল পর্যন্ত ৫৮৩ জনের মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছিল। এর সঙ্গে নতুন চারজনের নিহতের খবর যুক্ত হলো। আর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে আরও ৩৭ জনের মরদেহ পাওয়ার তথ্য জানা গেছে, যা মৃত্যুর এই হিসাবের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো।
মৃত্যুর এসব তথ্য স্বজন, হতাহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে আসা ব্যক্তি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, হাসপাতালের রেজিস্টার খাতা থেকে পাওয়া। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৬ জুলাই। সেদিন পুলিশের গুলিতে রংপুরের আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হয়েছিলেন।
গতকাল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের প্রাথমিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়, বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘাত, সহিংসতায় ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৬৫০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪০০ জন এবং ৫ ও ৬ আগস্ট ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আইনজীবীসহ আরও ৪ মৃত্যু
৫ আগস্টের সংঘাত, সহিংসতায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ও গতকাল চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও বরগুনায় একজন করে মোট চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মোক্তারপুর মোল্লাবাজারে ৫ আগস্ট রাতে হার্ডওয়্যারের একটি দোকানে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় দোকানে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে রাজমিস্ত্রি উজ্জ্বল হোসেন (৩০) আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি।
কুমিল্লার মোগলটুলী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন। আবুল কালাম আজাদ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা শাখার যুগ্ম সম্পাদক ও কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের মীর আলীপুর গ্রামের মোরশেদ আলমের ছেলে মো. আশিফ (২০) পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। তিনি ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন।
আর বরগুনার নিহত ব্যক্তির নাম আল আমিন হোসাইন (২৭)। তাঁর এক স্বজন জানান, তাঁদের বাড়ি যশোরের চৌগাছায়। আল আমিন বরগুনার আমতলীতে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। আমতলীতে একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ঘুমিয়েছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট রাতে বাড়িটির নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে গুরুতর দগ্ধ হন আল আমিন। রাজধানী ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে মারা যান তিনি।
সোহরাওয়ার্দীতে আরও ৩৭ লাশ
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০টির মতো লাশ এসেছে। লাশগুলো ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে হাসপাতালে এসেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক মো. শফিউর রহমান। ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের ঘটনায় ১৮ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে ৩০টির মতো মরদেহ এ হাসপাতালে আনা হয়। ১৯ জুলাই হাসপাতালটিতে ১৩ জনের লাশ পাওয়ার তথ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ছেপেছিল প্রথম আলো। সেই হিসাবের সঙ্গে এখন আরও ১৭ জনের মৃত্যুর খবর যুক্ত করা হলো। এর বাইরে হাসপাতালটিতে আরও ২০টি মরদেহ আসে ৪ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে। তাঁদের প্রত্যেকের শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল। এর মধ্যে ৪ আগস্ট ৩টি, ৫ আগস্ট ১৩টি ও ৬ আগস্ট আসে ৪টি লাশ। অর্থাৎ শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে আসা আরও ৩৭টি লাশ মোট হিসাবের সঙ্গে যুক্ত করা হলো।