শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২) বেসিস সফটএক্সপোর দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয় মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স। রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে আয়োজিত বেসিস সফটএক্সপোর দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত এই কনফারেন্সে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। পুরো মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স সমন্বয় করেন ব্যাবিলন রিসোর্সেস এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা লিয়াকত হোসাইন এবং বেসিস এর স্ট্যান্ডিং কমিটি অফ মেম্বার সার্ভিসেস এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজালাল।
আলোচকরা জানান, সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সেটি বাস্তবায়নে বর্তমান তরুণ প্রজন্মই নেতৃত্ব দেবে। এজন্য তাদেরকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাতে হবে। সরকার, ইন্ডাস্ট্রি ও অ্যাকাডেমিয়ার সমন্বয় ঘটিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন, দেশে বিদেশে ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে।
মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ইন্ডাস্ট্রি, একাডেমিয়া ও সরকারের মধ্যে ত্রিমাত্রিক বন্ধন তৈরির মাধ্যমে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের তত্ত্বাবধায়নে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য ইন্ডাস্ট্রি, সরকার এবং অ্যাকাডেমিয়ার সমন্বয় ঘটানো হবে। এর মাধ্যমেই আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ সফটওয়্যার ও আইটি, আইটিইএস খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক আয় হবে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, ৯৯৯ থেকে গত সাত বছরে ৫ কোটি সেবা দেয়া হয়েছে। ৩৩৩ থেকে সেবা পেয়েছেন সাড়ে ৭ কোটি নাগরিক। সরকারের ৫২ হাজার ওয়েবসাইটের প্রতিটির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বেসিস উদ্যোক্তারা। ডিজিটাল সুরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণে বিশ্বে ৩২তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। আশাকরা হচ্ছে, ২০২৫ সালে ই-কমার্স খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ শতাংশ। ডিজিটাল ফাইন্যান্সে ৫০০ শতাংশ এবং ডিজিটাল ডিভাইসে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
তিনি বলেন, আমরা ৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক্স, এআই, মেশিন লার্নিং, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং ও সাইবার সুরক্ষা নিয়ে ল্যাব স্থাপন করবো। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সেন্টার ফর ফোর আইআর স্থাপন করবো। ৪১ সাল নাগাদ আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে তুলবো।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০০৮ সালে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম, কিন্তু অনেকে তখন অবিশ্বাস ও সমালোচনা করেছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছি। আমরা যদি আমাদের সম্ভবনাময় তরুণদের কাজে লাগাতে পারি তাইলে স্মার্ট বাংলাদেশও বাস্তবে রূপ নিবে।
কৃষিক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কৃষিকে আমরা আধুনিক করেছি। কৃষিকে আমরা সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে যাব। কৃষকদের জন্য স্মার্ট কার্ড তৈরি করা হবে। এই কার্ডের মাধ্যমে জমির প্রকার কেমন, জমিতে কী ফসল হবে, কীভাবে উৎপাদন করতে হবে সব তথ্য পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে কৃষকরা তাদের সমস্যা নিয়ে কৃষিবিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এছাড়াও এই কার্ড দিয়ে কৃষক বাণিজ্যও করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, এখন ফল পাড়তে জাপানে রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে। ড্রোনের ব্যবহার হচ্ছে। আমরা কৃষিটাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে স্মার্ট কৃষিতে রূপান্তরিত করতে চাই। কৃষকদের জন্য স্মার্ট কার্ড তৈরি করা হবে। এই কার্ডের মাধ্যমে কৃষকরা তাৎক্ষণিক সেবা পাবেন। বিপণনও করতে পারবেন। বীজ বোনা থেকে শুরু করে বিপণন তথা ভোক্তার কাছে নিয়ে যেতে প্রতিটি ধাপে ডিজিটালাইজেশনের দরকার হবে। সেটাকেই আমরা বলছি স্মার্ট এগ্রিকালচার। এক্ষেত্রে বেসিস অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তি খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই এগিয়ে চলায় বেসিস অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমাদেরকে জানতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ কি? যখন একজন কৃষকও সেটি জানতে পারবেন তখন তিনিও হয়ে উঠবেন স্মার্ট নাগরিক।
তিনি আরও বলেন, কোভিডের পরে মানুষ টাকা অর্জন করায় মনোযোগ দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করতে হবে। আমাদের উচিত প্রতিটা ক্যাটাগরি ধরে ধরে এগিয়ে চলা। আমাদের অনেক আইসিটি বিনিয়োগকারী প্রয়োজন। বেসিস সে জায়গায় কাজ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করা উচিত না। এক সময় মানুষ কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করতো, এখন তা কিউআর কোড স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে। কাজেই স্বল্পমেয়াদে ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা হতে হবে তাৎক্ষণিক। আমাদের প্রধান লক্ষ্য গ্রাহক। তাদের সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্যই আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রাহকদের স্বস্তির জন্য স্মার্ট গ্রিড, অ্যাডভান্সড মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এএমআই) সিস্টেমসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদেরও তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সম্মিলিত ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারলে বাংলাদেশ অতিদ্রুত স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা একসাথে কাজ করবো, ঠিক যেভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে একসাথে ছিলাম। করোনা পরবর্তী সময়ে যখন আমরা আর্থ-সামাজিক ব্যবসায়িক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আমরা পরিপূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে এতো বড় পরিসরে এই আয়োজনটা করেছি। এর পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিলো দেশপ্রেম। স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণার পাশে থাকার দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এখানে আমাদের শিল্পের সক্ষমতা দেখানোর পাশাপাশি সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরছি। নতুন প্রজন্ম যেনো বুঝতে পারে তারাও যেন অংশ নিতে পারে সেই চেষ্টাটাই করেছি।
এ সময় প্যানেল আলোচনায় মন্ত্রীদের প্রত্যেক মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় সফটওয়্যার দিয়ে সমাধান দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট বাজেট ছাড়ের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন বেসিস সভাপতি। তার প্রশ্নের জবাবে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এমন পরিকল্পনা আমাদের আছে। স্টার্টআপ পলিসিতে সেটা খসড়া পর্যায়ে রয়েছে।
বেসিস সভাপতি আরও বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বেসিস বিশ্বাস করে, শুধু ৫ বিলিয়ন ডলার নয়, ২০৩১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করা সম্ভব। সরকার, ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়া এই তিনটি স্টেকহোল্ডার সমন্বিতভাবে তিনটি কাজ করলেই সেটি সম্ভব হবে। কাজগুলো হলো- তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন, দেশে বিদেশে ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরি।