ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) দেশের ই-কমার্স খাতের উন্নয়ন, সমস্যা নিরসন ও কল্যাণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি বাণিজ্যিক সংগঠন যেটি ২০১৪ সালে ই-ক্যাব যাত্রা শুরু করে। বর্তমান সময়ে ই-ক্যাবে বইছে নির্বাচনি আমেজ। বেশ ক’জন প্রার্থী এরই মধ্যে সংগ্রহ করেছেন মনোনয়নপত্র। তাদেরই একজন উদ্যোক্তা এবং সংগঠক হিসেবে সুপরিচিত ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজিজ।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজিজ বলেন, “আমি একটি ছোট ই-কমার্স ‘যাচাই ডট কম’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ই-ক্যাবের সদস্য। একজন ছোট উদ্যোক্তা হিসেবে সৎভাবে ই-কমার্স পরিচালনা করতে গিয়ে নানামুখী প্রতিকূলতা এবং সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। বার বার স্বপ্ন ভেঙে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। কখনো হাল ছাড়িনি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বার বার মনে হয়েছে যে যুদ্ধটা একা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি পাশে কাউকে পাই যিনি বা যেই সংগঠন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সঠিক পরামর্শ দিবেন এবং সাহস দিয়ে যুদ্ধজয়ের জন্য সহযোগিতা করবেন। আমি যেহেতু ছোট পরিসরে ই-কমার্স পরিচালনা করছি তাই কিছু সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি। ই-কমার্স সেক্টরের সকলের চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ই-ক্যাবের সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে এবং ই-ক্যাব সদস্যদের স্বার্থের জন্য কাজ করার সুযোগ চাই। এ জন্য ই-ক্যাবের সদস্যবৃন্দের ভালোবাসা, দোয়া এবং সমর্থন প্রত্যাশা করছি।”
উল্লেখ্য, আব্দুল আজিজ একজন সফল ব্যক্তিত্ব। জন্ম নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের মৌলভিপাড়া গ্রামে। বাবা সরকারি ব্যাংকের চাকরিজীবী হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া হয়েছে। আব্দুল আজিজ শিক্ষাজীবনে এসএসসি পাশের পর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ এবং আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি ছোট আকারে একটি গার্মেন্টস বায়িং হাউজ দিয়ে ব্যবসায়ী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু বিজনেসের দায়িত্বে নিয়োজিত দক্ষ জনশক্তির অভাবে কর্মজীবনের শুরুতে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিলেন। তাছাড়া সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) এর নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা তালিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগে সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়ে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগে যোগদান করেন। রেলওয়েতে যোগদানের পরও নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পূর্বের উদ্যোগের ব্যর্থতা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। আব্দুল আজিজ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন, অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান দক্ষ জনশক্তির অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং এই কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দেশের কল্যাণে এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বৈদেশিক রিজার্ভ রক্ষার জন্য এবং বিদেশি দক্ষ জনশক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার ছোট ছোট পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
এর ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি) নামে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল বিষয়ে সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, অনার্স এবং এমবিএ প্রোগ্রাম চালু করেন। আব্দুল আজিজ ই-কমার্স সেক্টরে বিনিয়োগের পাশাপাশি বিনিয়োগ করেন টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস সেক্টরে। পাশাপাশি বিনিয়োগ করেন অটোমোবাইল, আমিষ ব্র্যান্ডের এগ্রো খামার, সফটওয়্যার কোম্পানি, টেস্ট্রি এবং ‘সতেজ’ নামে আলাদা দুটি অর্গানিক এবং প্রসেসিং ফুড ব্র্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ‘মেট্রো সুপারশপ’ এবং রিটেইল বিজনেস, মিডিয়া, লজিস্টিকস কোম্পানি এবং আবাসন খাতের বিজনেসগুলোতে। পাশাপাশি তিনি গড়ে তোলেন একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইইটি), ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট (এনপিআই), বিজিআইএফটি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইএসটি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি (এনআইএমটি), অগ্রণী মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, ভাওয়াল গাজীপুর মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট (বিজিএমআই)।
আব্দুল আজিজ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংগঠনের সদস্যদের অধিকার আদায়ের জন্য ‘টেকনিক্যাল এডুকেশন কন্সোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি)’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট এসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (PIANU)’-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্বরত আছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য ডিজিটাল যুদ্ধের সৈনিক হিসেবে ভূমিকা রাখতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘যাচাই ডট কম’।
ই-কমার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) কে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই মন্তব্য করে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজিজ বলেন, “যেকোনো খাত গড়ে তুলতে বাণিজ্যিক সংগঠন অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। আর ডিজিটাল শিল্পখাত প্রতিষ্ঠায় ই-ক্যাবের ভূমিকা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য বলে আমি মনে করি। ই-ক্যাবের আসন্ন নির্বাচনে ই-ক্যাব সদস্যদের সমর্থন এবং সহযোগিতা পেলে সদস্যদের অধিকার আদায়ের জন্য তাদের পক্ষে তাদের কথাগুলোই বলতে চাই। আমি কথা দিচ্ছি, ইনশাআল্লাহ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হলে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সকল ই-ক্যাব সদস্যদের অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখবো।’