বিশ্বের বৃহত্তম ক্রান্তীয় প্লাবনভূমি এবং জীববৈচিত্র্যের অন্যতম প্রধান অভয়ারণ্য ব্রাজিলের প্যান্টানাল এখন ভয়াবহ এক দাবানলে পুড়ছে। এই অঞ্চলটি আয়তনে বাংলাদেশের চাইতে অন্তত ১৫ গুণ বড়। এখানে রয়েছে বিশাল বন্যপ্রাণী আবাসস্থল এবং বিভিন্ন প্রজাতি উদ্ভিদ ।
গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এই অঞ্চলে বিপন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের রেকর্ড দাবানলের পর এই বছরের দাবানল সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দাবানলে বাঘের বাচ্চা, বিরল টিয়া পাখির বাসা, এবং তাপিরের মতো প্রাণীরাও মারা যাচ্ছে।
প্যান্টানাল একটি নদী, বন এবং জলাভূমির জটিল এক জাল, যা প্রায় ৬৮,০০০ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত। এর প্রায় ৮০ শতাংশ ব্রাজিলের মধ্যে পড়েছে এবং বাকি অংশটি বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ের মধ্যে বিভক্ত। এই জলাভূমির কিছু অংশ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম টিয়া পাখি, কেমান, এবং বিপন্ন বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল রয়েছে।
গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি শুষ্ক মৌসুম দেখা দিয়েছে, যা বন উজাড় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। এই বছরেই ৭ হাজার বর্গমাইল এলাকা দাবানলে পুড়ে গেছে, যা আয়তনে প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির আয়তনের সমান। পরিবেশবাদী এবং বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই দাবানলের কারণে হাজার হাজার প্রাণী মৃত্যুবরণ করছে, যা এই অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকি।
দাবানল এমনকি পানিতে ঝাঁপানো দক্ষ জাগুয়ারদেরও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিজ্ঞানীরা অন্তত ৩টি জাগুয়ারকে মৃত অবস্থায় এবং ৪টি জাগুয়ারকে পুড়ে যাওয়া অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। স্থানীয় জীববিজ্ঞানী গস্তাভো ফিগুইরোয়া জানান, আমরা প্যান্টানালের জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস হতে দেখেছি।
এই দাবানলে জায়গাগুলি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে এবং অনেক প্রাণী পানির অভাবে এবং খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে। তাপির এবং বিশাল তামান্দুয়া জাতীয় বিপন্ন প্রাণীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ভিদ এবং অন্যান্য ছোট প্রাণীও এ অবস্থা থেকে বাঁচতে পারেনি।
বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এই দাবানল চলবে অক্টোবর পর্যন্ত, যখন বর্ষাকাল এসে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে। তবে ততক্ষণে এই অঞ্চলটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে যে এটি পুনরুদ্ধার করতে অনেক সময় লাগবে।