৪৪তম বিসিএসে প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের দেখা খাতায় দেওয়া নম্বরের পার্থক্য ২০ শতাংশ বা এর বেশি এমন খাতা দেখছেন তৃতীয় পরীক্ষক। এর মধ্যে খাতা জমা দেওয়ার কথাও ছিল কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের মতো তৃতীয় পরীক্ষকের মধ্যে কিছু পরীক্ষক খাতা দেখে জমা দিতে গড়িমসি করছেন। এতেই বিপাকে পড়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এখন লিখিত পরীক্ষার ফল দিতেও দেরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলে এই পরীক্ষকদের কারণে একধরনের বিব্রত হচ্ছে পিএসসি। পিএসসি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে পিএসসি সূত্র জানায়, ৪৪তম বিসিএসের ৯ হাজারের বেশি খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে দেখতে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ পরীক্ষকই খাতা দেখা শেষ করে খাতাগুলো পিএসসিতে জমা দিয়েছেন। তবে বেশ কয়েকজন পরীক্ষক এখনো খাতা দেখা শেষ করতে পারেননি। তাঁরা যদি সঠিক সময়ে খাতা দিতেন, তাহলে ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল ঈদের আগেই এই মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করতে পারত পিএসসি। এখন সেটি করা কঠিন। ঈদের আগেই ফল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা তৃতীয় পরীক্ষক খাতা দেখা চূড়ান্ত করেননি। ঈদের আগে ফল দেওয়ার চেষ্টা আমাদের রয়েছে। তাঁদের কাছে খাতা পাওয়ার পর সেটি বোঝা যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে ৪৪তম বিসিএসের খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের এসব খাতা দেখতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের খাতা কিছুটা কম, তাঁদের ১০ দিন আর যাঁরা বেশি খাতা পেয়েছেন, তাঁদের ১৫ দিনের মধ্যে খাতা দেখা শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু পরীক্ষক খাতা দেখতে বেশি সময় নিচ্ছেন।
পিএসসি সূত্র জানায়, বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তা প্রথম পরীক্ষকদের দেখার জন্য দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের এই খাতা দেখতে সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। এখন প্রথম পরীক্ষকেরা সেই খাতা জমা দিয়ে দ্বিতীয় পরীক্ষক হিসেবে খাতা দেখেছেন। এরপর তাঁরা যখন দ্বিতীয় পরীক্ষক হিসেবে খাতা জমা দেন, তখন তা যাচাই করা হয়েছে। এই দুই খাতার মধ্যে ২০ শতাংশ বা এর অধিক নম্বরের পার্থক্য থাকলে তা নিয়ম অনুসারে তৃতীয় পরীক্ষককে দিয়ে দেখিয়ে চূড়ান্ত করা হয়।
পিএসসির একটি সূত্র জানায়, ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশ দেরি হওয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পিএসসি। ফল দিতে দেরির কারণ হিসেবে তদন্ত কমিটি ৩১৮ পরীক্ষকের গাফিলতি বা দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায়। পরীক্ষকদের এমন অবহেলা কীভাবে কমানো যায়, সে জন্য তদন্ত কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের অংশ হিসেবে পিএসসি বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। পিএসসির নানা উদ্যোগের কারণে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়ার হার কমেছে। ৪১তম বিসিএসে ১৫ হাজার, ৪৩তম বিসিএসে ১০ হাজার ও ৪৪তম বিসিএসে ৯ হাজারের কিছু বেশি খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে গেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়ার হার কমেছে।
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৪৪তম বিসিএসের অনলাইন আবেদন শুরু হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি। পরে তা বাড়িয়ে ২ মার্চ নির্ধারণ করে পিএসসি। এরপর ২০২২ সালের ২৭ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ২৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের মাধ্যমে রেকর্ড করে পিএসসি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৭০৮ পরীক্ষার্থী পাস করেন।
৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ৫০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১০, আনসার ক্যাডারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, কর ক্যাডারে ১১, সমবায়ে ৮, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিকে ৭, তথ্যে ১০, ডাকে ২৩, বাণিজ্যে ৬, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭, খাদ্যে ৩, টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৪৮৫ ও শিক্ষা ক্যাডারে ৭৭৬ জন নেওয়া হবে।