বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়েছে, গ্রাহকরা ফেরত চাইছে পাওনা টাকা; এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ছয় মাস সময় চেয়েছেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল।
দীর্ঘদিনেও প্রতিশ্রুত পণ্য দেওয়া যায়নি এমন কিছু গ্রাহককে কয়েক মাস আগে ‘রিফান্ড চেক’ দিয়েছিল এই অনলাইন মার্কেটপ্লেস। চলতি মাসের শুরুতেই সেই চেক ক্যাশ হওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংক টাকা দেয়নি।
ফেইসবুক লাইভে এসে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল বলেন, সর্বশেষ নির্দেশিকার কারণে ‘রিফান্ড’ দেওয়া সম্ভব নয়; দেরিতে হলেও গ্রাহকদের পণ্যই দেওয়া হবে।
গত ১৬ জুন ইভ্যালি নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির গ্রাহকের কাছে ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকায় দেনা রয়েছে।
এসবের বিপরীতে ইভ্যালির মোট সম্পদের পরিমাণ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা। এরমধ্যে চলতি মূলধন রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩৭৩৬ টাকা।
বর্তমান সম্পদ দিয়ে বকেয়ার মাত্র ১৬ শতাংশ পরিশোধ করতে পারবে ইভ্যালি।
এই অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক নোটিস দিয়ে আগামী ১ অগাস্টের মধ্যে ইভ্যালির আয়-ব্যয়, দায়-দেনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে ইভ্যালিকে।
বাংলাদেশের ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন চার মাস আগেই তৈরি করা হয়েছিল জানিয়ে রাসেল দাবি করেন, এরপর ইভ্যালি অনেক লাভ করেছে, অনেক উন্নতি করেছে। ওই প্রতিবেদনে ইভ্যালির ‘ফিউচার ভ্যালুয়েশন’ করা হয়নি।
“রিপোর্টে আমাদের ভ্যালুয়েশন মিসিং। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছিলাম যে আমাদেরকে ভ্যালুয়েশন করার সুযোগ দিন। আমাদের বিশাল এক কম্পোনেন্টকে স্কিপ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই বিজনেস দিয়ে কী পরিমাণ বিজনেস করা সম্ভব, সেটা ভ্যালুয়েশনে আসবে। যে অ্যামাউন্ট ডিউ আছে, এই অ্যামাউন্টটা রিকভারি করা কোনো ব্যাপার না।”
ইভ্যালিসহ আরও কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরন এবং গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে দীর্ঘ সময় পরও পণ্য না দেওয়া, অর্থ ফেরত না দেওয়াসহ ক্রেতা ‘ঠকানোর’ বিস্তর অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা শুরু হয়েছে।
তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নিরীক্ষার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়।
বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেও ইভ্যালি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দাবি করে রাসেল বলেন, “আমাদের লসগুলো ধীরে ধীরে কমে আসছিল। আমরা লাভ করা শুরু করেছিলাম।
“এই ধরনের বিজনেসে মেগাস্কেলের টারময়েল হলে সেলস কিছুটা ড্রপ করে। কিন্তু এটা সত্যি যে, অলমোস্ট ডিসকাউন্ট ছাড়াই গতকাল প্রায় ২০ কোটি টাকার অর্ডার কনফার্ম হয়েছে। এই ২০ কোটি টাকা অন্য সময়ে ৫০০ কোটি টাকার সমান। এই অর্ডারগুলো টাইমলি দিতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার মেনে সেখানে কিছুটা মোডিফিকেশনের দরকার হবে।”
‘স্বাভাবিক’ ব্যবসা করার সুযোগ পেলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরনো সব অর্ডার শোধ করে দেওয়া সম্ভব হবে বলে পাওনাদারদের আশার কথা শোনান ইভ্যালি এমডি।
তিনি বলেন, “এখন যদি বলেন ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডিকে ধরে নিয়ে কালকে এই টাকা শোধ করতে হবে। এভাবে ডেভেলপমেন্ট ফেইজে বন্ধ করে দিয়ে কোনো বিজনেসের বিনিয়োগ ফেরত আনা সম্ভব হয় না।
“আপনারা আমাদেরকে ছয় মাস সময় দেবেন। এর মধ্যে যদি কোনো পেন্ডিং অর্ডার থাকে, কোনো ব্যাকলগ থাকে…। যেই অ্যাকশনটা আপনারা নিতে চান, সেটা আপনারা ছয় মাস পরেও নিতে পারবেন। কিন্তু আমাদেরকে সুযোগ দেন। ইভ্যালিকে বিজনেস করতে দিলে ইভ্যালি সবই সফলভাবে শেষ করতে পারবে।”
ব্যাংকগুলোর সমালোচনা করে রাসেল বলেন, “আমাদের কিছু রিফান্ড চেক দেওয়া ছিল। সেটা আমাদের পোর্টফোলিওর তুলনায় খুবই কম। যখন টাইম লাইনের মধ্যে প্রোডাক্ট আমরা ম্যানেজ করতে পারি নাই, তখন কাস্টমাররা আমাদেরকে এমন প্রেসারাইজ করেছিল যে তখন রিফান্ডের মেথড নিতে হয়েছিল। এর মাঝে ব্যাংকগুলোও আমাদেরকে অসহযোগিতা করতে শুরু করল যে তারা আমাদের ব্যাংকের এক্টিভিটিজ কান্টিনিউ করতে পারছে না।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক, তদারকি সংস্থা, গণমাধ্যম সব দিক থেকে চাপ ইভ্যালির ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে অভিযোগ করেন রাসেল। তিনি হুঁশিয়ার করেন, ইভ্যালিকে ব্যবসা করার সুযোগ না দিলে ভোক্তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
“বিজনেস যদি করতে পারি, তাহলে লাভ দিয়ে পুরোনো অর্ডার অ্যাডজাস্ট করা সম্ভব। স্মুদ বিজনেস করার চান্স দেন। আমাদের ব্যাংক একাউন্ট যদি বন্ধ রাখেন, আমি কাস্টমারের রিফান্ডগুলা ঠিক মতো প্রসেস করতে পারতেছি না। পুরোনো অর্ডারগুলো দিতে হলেও বিজনেস করতে দিতে হবে।”
যাদের পণ্য আটকে রয়েছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সামগ্রিক যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিতে এগুলো ডেলিভারি করতে বিগত দিনগুগলোতে যেভাবে পেরেছিলাম, তার চেয়ে একটু বেশি সময় লাগবে। এই সময়টায় একমাত্র আপনারাই আমাদেরকে সাপোর্ট করতে পারেন।
“আপনি ভাবতেছেন যে হয়ত প্রেসার দিলেই আমারটা আদায় হয়ে যাবে। এই প্রেসার ইভ্যালির উপর পড়লে ইভ্যালির সার্ভাইবালের কোনো রাস্তা থাকবে না।”