দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর অবশেষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) উদ্দেশে যাত্রা করতে যাচ্ছে বোয়িংয়ের তৈরি স্টারলাইনার মহাকাশযান। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৩৪ মিনিটে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৬ মে রাত ১০টা ৩৪ মিনিট) নাসার দুজন মহাকাশচারী নিয়ে ছুটে যাবে স্টারলাইনার। অ্যাটলাস ফাইভ রকেটে করে মহাকাশে পাঠানো হবে মহাকাশযানটি। স্টারলাইনারের যাত্রা সফল হলে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের পর মহাকাশ পরিবহনে দ্বিতীয় বেসরকারি সংস্থা হিসেবে পরিচিতি পাবে বোয়িং।
২০১৫ সালে মহাকাশে যাওয়ার কথা ছিল স্টারলাইনারের। পরে ২০১৯ সালে মহাকাশযানটিকে আবার প্রস্তুত করা হলেও সফটওয়্যার ত্রুটির কারণে যাত্রা পিছিয়ে যায়। এরপর ২০২১ সালের আগস্ট এবং ২০২২ সালের মে মাসে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও তা সফল হয়নি।
রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল হওয়ায় নিজেরা মহাকাশযান তৈরির বদলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মহাকাশযান ব্যবহার করতে বেশি আগ্রহী নাসা। আর তাই এক দশক আগে নাসা বেসরকারি মহাকাশযান ব্যবহারের ঘোষণা দেয়। তখন স্পেসএক্স ও বোয়িং নাসার সঙ্গে কাজ শুরু করে। মহাকাশযান তৈরির জন্য স্পেসএক্সের সঙ্গে ২৬০ কোটি ও বোয়িংয়ের সঙ্গে ৪২০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তিও করে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। চুক্তির শর্ত মেনে ২০২০ সালে প্রথম মহাকাশে যাত্রা করে স্পেসএক্সের মহাকাশযান।
স্টারলাইনার মহাকাশযান লম্বায় ৫ মিটার ও চওড়ায় ৪ দশমিক ৬ মিটার। অ্যাপোলো মিশনে ব্যবহৃত ক্যাপসুলের চেয়ে বেশ চওড়া মহাকাশযানটিতে সর্বোচ্চ সাতজন বসতে পারেন। এবারের মহাকাশ অভিযানে মূলত মহাকাশচারীদের নতুন পোশাকের (স্পেস স্যুট) কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে। নাসার নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়াম স্টারলাইনারের প্রথম যাত্রী হিসেবে মহাকাশে ভ্রমণ করবেন। দুজনই নৌ-বৈমানিক ও সাবেক আইএসএস কমান্ডার।
নাসার তথ্যমতে, মহাকাশচারীদের নতুন পোশাকটি আগের তুলনায় প্রায় ৪০ ভাগ হালকা ও নমনীয়। পোশাকটির সঙ্গে স্পর্শনির্ভর ও সংবেদনশীল গ্লাভস থাকায় মহাকাশচারীরা সহজেই ট্যাবলেট কম্পিউটারের মতো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন। স্টারলাইনার প্রায় ১০ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। মার্কিন মহাকাশ পরামর্শদাতা সংস্থা কুইল্টির পরামর্শক কালেব হেনরি বলেন, স্টারলাইনার উৎক্ষেপণ মহাকাশযানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বেসরকারি খাতে নতুন মহাকাশযান হিসেবে স্টারলাইনার ভবিষ্যতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখন গবেষণার সুযোগ তৈরি হলো।