রোববার ( ৪ জুলাই ) ‘ডিজিটাল হাট ডট নেট’ উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার ক্রেতা পশু কেনার জন্য কলসেন্টারে যোগাযোগ করছেন। অনেকে ইতোমধ্যেই অর্ডার করেছেন। এতো কম সময়ে এতো সাড়া পেয়ে অভিভূত ডিজিটাল হাট ডট নেট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, মাত্র একদিনে এতো সাড়া তারা প্রত্যাশাও করেননি। এবার অনলাইনে পশু বেচাকেনায় রেকর্ড হবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনলাইনে কোরবানির গরু কেনার প্ল্যাটফর্ম ডিজিটাল হাট ডট নেট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে এবারের হাট বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। এতে কারিগরি সহযোগিতা করছে এটুআইর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম একশপ। রোববার এ ডিজিটাল হাটের কার্যক্রম শুরু হয়।
‘ডিজিটাল হাট ডট নেট’ ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে বলে জানান ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার। তিনি বলেন, ‘রোববার ডিজিটাল হাট উদ্বোধন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রায় ৫০ হাজার ক্রেতা পশু কেনার জন্য বিভিন্ন বিষয় জানতে চেয়েছেন। অনেকে অর্ডার করেছেন। তবে এখনও সেগুলো ডেলিভারি করা হয়নি।’ এবার অনলাইনে পশু কেনাবেচা আগামী কয়েকদিনে জমজমাট হয়ে ওঠবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি বলছেন, ‘গত দুইদিনে প্রচুর কোয়্যারি পাচ্ছি। কলসেন্টারে সারাক্ষণ যোগাযোগ করছেন ক্রেতারা। এবার রেকর্ড সংখ্যক পশু বিক্রি হবে অনলাইনে।’
ই-ক্যাবের তথ্যে দেখা গেছে, গত বছর চালু হওয়া অনলাইন হাট থেকে বেচাকেনা হয়েছে ২৭ হাজার পশু। আর অনলাইন থেকে ছবি দেখে পরে সরাসরি কৃষকের বাড়ি ও খামার থেকে ৯০ হাজারের বেশি গরু কিনেছেন ক্রেতারা। জেলাভিত্তিক সরকারি প্ল্যাটফর্মে কমপক্ষে পাঁচ হাজার ৫০০ পশু বিক্রি হয়েছে। এবার তারা দ্বিগুণ বিক্রির প্রত্যাশা করছে।
করোনা সংক্রমণ রোধে আরোপিত বিধিনিষেধে দেশে লকডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই অবস্থায় কোরবানির পশু কেনার জন্য নিরাপদ উপায় অনলাইন। তাই অনলাইনেই পশু কেনায় ঝুঁকছে ক্রেতারা। অনলাইনে পশু কেনাবেচাতে ক্রেতার আস্থা বাড়ছে বলে জানায় বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনও (বিডিএফএ)। সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ৫০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগই হয়েছে অনলাইনে।
ডিজিটাল হাট ডট নেটে নিবন্ধিত শত শত প্রতিষ্ঠান গরুর বর্ণনা, ছবি ও ভিডিও, দাম ক্রেতার সামনে তুলে ধরছেন। সেখান থেকে ক্রেতা তার পছন্দের পশু কিনতে পারছেন। জনপ্রিয় অনলাইন শপগুলোও এই হাটে গরু বিক্রি করতে পারছেন। এছাড়াও এই অনলাইন শপগুলোই আবার ‘ডিজিটাল হাট ডট নেট’ এ নিবন্ধন করে পশু বিক্রি করতে পারছেন। এছাড়া বিভিন্ন খামারি ও ফার্ম নিজেদের নামে পৃথকভাবেও অনলাইনে পশু বিক্রি করছেন।
এবার ঈদে পশু বিক্রি নিয়ে আশাবাদী আজকের ডিলের প্রধান নির্বাহী এ কে এম ফাহিম মাসরুর। তিনি জানান, গত কোরবানির ঈদে তারা অনলাইনে প্রথম পশু বিক্রি শুরু করেছিলেন। সেবার বিক্রি হয়েছিল গরু-ছাগল সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টি। এবার তার চেয়ে বেশি বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা। পশু কেনাবেচার ক্ষেত্রে আজকের ডিল একটি লাইভ সেশন নিয়ে আসছেন বলেও জানান তিনি। এতে ক্রেতা লাইভ ভিডিও চ্যাটে পশু দেখে কিনতে পারবেন।
এছাড়া সম্প্রতি ‘গরুর হাট’ নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছে ইভ্যালি। বিক্রয় ডটকম ‘বিরাট হাট’ নামের ক্যাম্পেইন নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে পশু বিক্রি করে আসছে। দারাজ ডটকম ডটবিডি ২০১৭ সাল থেকে ‘গরুর হাট’ নামক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রি করে আসছে। তারা গরুর লাইভ ওয়েট, রং, দাঁত ইত্যাদি দেখে কেনার এবং ছবির পাশাপাশি খামার ও গরুর ভিডিও দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।
২০২০ সাল থেকে ‘অনলাইন কোরবানির হাট’ শিরোনামে কোরবানির পশু বিক্রি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অথবা ডটকম। বেঙ্গল মিট পাবনায় তাদের খামার করেছে। তবে রাজধানীসহ সারাদেশেই অনলাইনে তারা কোরবানির পশু সরবরাহ করছে।
অর্গানিক খাবারের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শুদ্ধ খামারে নয়, গ্রামের মাঠে চরে বেড়ে ওঠা অর্গানিক গরু সরবরাহের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। তারা সরাসরি কৃষকদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া প্রিয়শপ ডটকম, দেশি গরু ডটকম, কিউকম ডটকম, সামারাই ক্যাটল, সাদেক অ্যাগ্রো, দেশিগরুবিডি ডটকম, মেঘডুবি অ্যাগ্রোসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পশু বিক্রি করছে। অনলাইনে পশু বিক্রির এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান গরু কেনা থেকে শুরু করে মাংস প্রস্তুত করে একেবারে বাসায় পৌঁছে দেয়ার কাজও করছে।
আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠান ঈদের আগে গরু কিনে কৃষকের কাছেই রাখার সুবিধা দিচ্ছে যেন সেই পশু ক্রেতার বাড়িতে রাখতে ঝামেলা না হয়। অনলাইনে পশু বেচাকেনার ক্ষেত্রে পশুর ওজনকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। জীবন্ত অবস্থায় ওজনের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। কেজিপ্রতি দাম ধরা হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও কোন কোন বিক্রেতা ওজন ছাড়াও গরুর সৌন্দর্যের ভিত্তিতেও পশু বিক্রি করছেন।
তবে ডিজিটাল হাটের পাশাপাশি হাট-বাজারেও বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু। পশু পরিবহনে থাকছে বিশেষ ট্রেন। পর্যাপ্ত দেশি পশু মজুদ থাকায় বিদেশ থেকে আনা পুরোপুরি বন্ধ রাখতে সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে জানা গেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, এ বছর এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার বেশি। আসন্ন ঈদুল আজহায় এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে।