নতুন প্রাইসিং ফর্মুলা হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে সব জ্বালানি তেলের দাম। ফলে দাম ওঠানামা করবে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করায় দেশে ব্যবহৃত অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমেছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১০৯ টাকা থেকে ৭৫ পয়সা কমে ১০৮ টাকা ২৫ টাকা পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে অকটেনের দাম লিটারপ্রতি ১৩০ টাকা থেকে ৪ টাকা কমে ১২৬ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১২৫ টাকা থেকে ৩ টাকা কমে ১২২ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ দামের বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সরকার গত ২৯ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের নির্দেশিকার প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ প্রাইসিং ফর্মুলা অনুসারে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হলো
জ্বালানি তেলের সর্বশেষ মূল্য সমন্বয় হয় ২৯ আগস্ট, ২০২২। এরপর কোভিড মহামারি-উত্তর সরবরাহ সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে সমুদ্রপথে জ্বালানি পণ্যের প্রিমিয়াম, পরিবহন ভাড়া, বিমা ও ব্যাংক সুদের হার ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। উল্লিখিত সময়ে শুধু মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রা অবমূল্যায়িত হয়েছে এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের (প্রধানত ডিজেল) মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।
আরও বলা হয়, ফর্মুলা বা গাইডলাইন অনুসারে এখন থেকে প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের আমদানি বা ক্রয়মূল্যের আলোকে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় করা হবে।
উল্লেখ্য, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় বর্তমানে ডিজেল লিটারপ্রতি ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি বা ১৩৩ টাকা ৫৭ পয়সা (১ রুপি=১.৪৪ টাকা) এবং পেট্রোল ১০৬ দশমিক শূন্য ৩ রুপি বা ১৫২ টাকা ৬৮ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। এটা বাংলাদেশ থেকে যথাক্রমে প্রায় ২৪ টাকা ৫৭ পয়সা ও ২৭ টাকা ৬৮ পয়সা বেশি।
জ্বালানি বিভাগ জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারদরের ওপর নির্ভর করে এখন থেকে প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়াও উন্নত বিশ্বে প্রতিমাসেই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। আবার কমলে দাম কমবে।
প্রসঙ্গত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিলো। আইএমএফ সরকারকে যে সাড়ে চার বিলিয়র ডলারের ঋণ দিয়েছে তার অন্যতম শর্ত হচ্ছে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ থেকে সব ভর্তুকি তুলে দিতে হবে।
জ্বালানি বিভাগ বলছে, আইএমএফ গত নভেম্বর থেকেই স্বয়ংক্রিয় এই মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি কার্যকর করার বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে কখন নির্বাচনের আগে সরকার তেলের দামের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার পক্ষে ছিল না।