একদিন এক পথচারী রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু হাতি দেখতে পেলেন। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন হাতিগুলোর পা খুবই চিকন দড়ি দিয়ে বাধা। কোনো লোহার শিকল কিংবা খাঁচা না! তারা চাইলেই দড়ি ছিড়ে বের হয়ে যেতে পারে যেকোনো মূহুর্তে। কিন্তু হাতিগুলো দড়ি ছেড়ার কোনো চেষ্টাও করছেনা! দাড়িয়ে আছে শান্ত হয়ে। সে পাশেই দাড়ানো হাতিগুলোর প্রশিক্ষককে জিজ্ঞেস করলো, “তারা কেনো দড়ি ছিড়ে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেনা?” উত্তরে প্রশিক্ষক বললেন,”এই হাতিগুলো যখন একদম ছোট ছিলো তখন তাদের এই দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। ছোট বয়সে তাদের এই দড়ি ছিড়ে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলোনা। যেহেতু ছোটবেলায় তারা এই দড়ি ছিড়তে পারেনি, বড় হয়েও তারা মনে করে তাদের দ্বারা এই বাধা পার হওয়া সম্ভব না। তাই তারা চেষ্টাও করেনা।”
কথাগুলো শুনে পথচারী ভদ্রলোক অভিভূত হলেন! এরা যেকোনো সময় চাইলেই মুক্ত হতে পারে তাদের বন্দিদশা থেকে। কিন্তু তারা মুক্ত হওয়ার চেষ্টাও করছেনা! কারণ তাদের ধারণা তারা পারবেনা। আমাদের, মানব জাতির অবস্থাও এই প্রাণীদের থেকে ভিন্ন নয়। আমরাও হাল ছেড়ে দেই যখন কোনো কাজে প্রথমবার ব্যর্থ হই, দ্বিতীয়বার চেষ্টা করার বদলে। আমরা ভাবি পারবোনা, তাই হাত গুটিয়ে নেই। অথচ সফলতা মাত্র আর কয়েক কদম দূরেই দাড়িয়ে আছে তা দেখতে পাইনা।
হেরে যাওয়া, ব্যর্থ হওয়া, পিছিয়ে যাওয়া এগুলো জীবনের সেই অংশ যাদের চাইলেও বাদ দেয়া সম্ভব না। যেটা সম্ভব সেটা হচ্ছে বারবার চেষ্টা করা। বলা হয় খুব সহজভাবে কোনো কিছু পেয়ে গেলে নাকি তার আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। অপরদিকে অনেক কষ্ট করে যেই জিনিস পাওয়া যায় তাকে পাওয়ার খুশিটা হয় আকাশছোঁয়া। এই আকাশছোঁয়া খুশি যে কারো দরজায় কড়া নাড়তে পারে শুধু দরকার তিনটি জিনিসের; চেষ্টা, চেষ্টা এবং চেষ্টা।
পৃথিবীর অন্যতম ধনী, কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন (কেএফসি)এর প্রতিষ্ঠাতা ওয়ারেন বাফেটকে কে না চেনে! এই ওয়ারেন বাফেটকে নিজের চিকেন রেসিপি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে রেস্টুরেন্ট মালিকদের দ্বারে দ্বারে। ধারণা করতে পারেন কতবার তাকে রেস্টুরেন্ট মালিকদের থেকে “না” শুনতে হয়েছে? ১০০৯বার! শুনতে অস্বাভাবিক লাগলেও সত্যি! হাজারবারের উপরে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি দমে যাননি। নিজের রেসিপির স্বাদের উপর তার আস্থা ছিলো। সেই আস্থাই তাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। ভাবুন তো তিনি যদি শতবার চেষ্টা করেই থেমে যেতেন! কিংবা তার থেকেও কমে! তাহলে আর আজকে পৃথিবীর সেরা ধনীদের খাতায় তার নাম থাকতোনা। তিনি তার পায়ে বাধা দড়িকে ছিড়তে পেরেছিলেন। তিনি জানতেন এই দড়ি ছেড়া সম্ভব।
অনেক সময় আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে হারিয়ে দেই, নিজের সক্ষমতাকে সন্দেহ করি বলে হেরে যাই। মানুষ চাইলে কি না পারে! হ্যাঁ, কেউ কেউ কোনো কাজ একবারেই পারে আর কেউ পারে দশমবারে, তবু পারে। বরং দশবার করার কারণে সেই কাজের প্রতি তার আলাদা দক্ষতা এসে যায়। জীবন এরকমই, সব নেতিবাচকের মধ্যে লুকিয়ে থাকে ইতিবাচক কিছু, আমরা তা খুঁজে বের করতে পারিনা বলেই জীবনে তিক্ততা বেড়ে যায়। কোনো বাধার সম্মুখীন হলে আমরা প্রথমে বাধা পেরোবার চেষ্টা করি, তারপর না পারলে হয়তো আরেকবার চেষ্টা করি আর তারপরও না পারলে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেই। মনে করি এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। আসলে সীমাবদ্ধতা আমাদের মনে। মনের সীমাবদ্ধতা পার হতে পারলেই সামনে সুবিশাল খোলা দিগন্ত। হাল ছেড়ে দিয়ে মাঝ নদীতে থেমে যাওয়ার কোনো মানে হয়না। হাল ধরে রাখতে হবে। ভাগ্যের সাথে কর্মেও বিশ্বাসী হতে হবে। জীবনে কখনো ব্যর্থতার গ্লানিতে ভুগলে একবার ঐ দড়িবাধা হাতির কথা ভাববেন, যে চাইলেই মুক্ত হতে পারে। কিন্তু বন্দি হয়ে আছে কারণ সে মনে করে সে “পারবেনা।”
আমাদের সবারই হাতে কিংবা পায়ে এমনই কোনো না কোনো দড়ি বাধা। আমরা একবার সেই দড়ি ছিড়তে পারিনি, কিংবা কয়েকবার পারিনি তাই মনে করি কখনোই পারবোনা। কিন্তু পারা সম্ভব। কখনো কখনো দড়ি ছিড়তে চেষ্টা করতে হতে পারে ১০০৯ বার।
সব অসফল মানুষদের কয়েক কদম সামনেই সফলতা দাড়িয়ে থাকে। পৃথিবীতে কেউই অসফল না শুধু কেউ কেউ ঐ কয়েক কদম এগিয়ে না গিয়ে হাল ছেড়ে দেয়।