বিশ্বখ্যাত অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলিবাবা.কম এর কথা কে না শুনেছে! গুগলের পরে থাকা সবচেয়ে নামী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এটি একটি। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মাকেও সবার কম বেশি চেনার কথা। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী তিনি বিশ্বের ৩৩তম শীর্ষ ধনী। তার প্রতিষ্ঠান আলিবাবার মোট সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলার। আলিবাবা কিংবা জ্যাক মা এখন যেই সফলতার চূড়ায় অবস্থান করছেন সেখানে পৌছাতে তার দিতে হয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। পথে অনেকবার পা ফসকে গেছেন কিন্তু হাল ছাড়েননি। জ্যাক মার আজকের সফলতার পেছনে রয়েছে এক বন্ধুর পথের গল্প।
ছোটবেলা থেকেই জ্যাক মা ব্যর্থতার স্বাদ পেয়ে গিয়েছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যন্ত তিনি কয়েকবার ফেইল করেছেন। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। অবশেষে কোনোরকমে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে চাকরিক্ষেত্রে নেমেও খুঁজে পেয়েছেন ব্যর্থতা। তিনি কমপক্ষে তিরিশবার চাকরির জন্য প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। এমনও হয়েছে যে কোথাও চাকরি খুঁজতে গিয়েছেন সেখানে তিনি বাদে সব প্রার্থীই উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে এই ব্যর্থতা তার মধ্যে কখনো হতাশা তৈরি করেনি। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে যেই জ্যাক মাকে এত বার প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে তিনি আজ তার দেশ চীনে ১৪মিলিয়ন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
চাকরি খুঁজে খুঁজে হয়রান জ্যাক মা নিজে কিছু করার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু সেই কিছুটা কি সেটাই তার মাথায় স্পষ্ট হচ্ছিলোনা। ঠিক সেসময়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের একটি সুযোগ পান। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তিনি পরিচিত হলেন ইন্টারনেটের সাথে। ইন্টারনেট তখন সারাবিশ্বের কাছেই একদম নতুন জিনিস। দেশে ফিরে তিনি ইন্টারনেটকে কাজে লাগানোর কথা ভাবলেন। যেই ভাবা সেই কাজ! তিনি ইন্টারনেটে ‘চায়না পেইজ’নামক একটি পেইজ খুললেন সেখানে চীনের রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য প্রদান করা হতো। জ্যাক মার এই উদ্যোগ দারুণ হলেও এখান থেকে তিনি খুব বেশি সাড়া পাননি ফলে পেইজটি তাকে বন্ধ করে দিতে হয়। এরপরেই জ্যাক মার মাথায় আলিবাবা.কম তৈরি করার চিন্তা আসে।
আলিবাবা শুরু হয় দু’কামরার ছোট্ট একটি অ্যাপার্টমেন্টে। শুরু করার সময় জ্যাক মার সাথে ছিলেন তার সহধর্মিণী ও আরো ১৬জন তারই মতো স্বপ্নদ্রষ্টা। তারা ঠিক করেন আলিবাবা.কম এ সবাই প্রথমে পাঁচ লাখ আরএমবি করে বিনিয়োগ করবেন। ১২ মাসের মধ্যে যদি এই টাকা থেকে তারা কোনো লাভ উঠাতে না পারেন তবে অন্য কিছু ভাববেন। ভাগ্যের পরিহাসে আট মাসের মধ্যেই বিনিয়োগ করা সকল অর্থ শেষ হয়ে যায়। এই কাহিনীর ফলে বাকি ১৬জন দমে গেলেও জ্যাক মা পিছপা হননি। তার ভরসা ছিলো নিজের আর নিজের লক্ষ্যের উপর। তাই শুরুর দিকে আলিবাবা লাভের দেখা না পেলেও জ্যাক মা তার কাজ করে যেতে থাকেন। কিছুদিন পরে তিনি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন যেখানে চীনের সকল ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে বৃহৎ সকল ধরণের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের পণ্যের তালিকা দেয়া থাকে।
প্ল্যাটফর্মটি বেশ ভালো সাড়া পায় এবং এর মাধ্যমে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঋণ পেতে শুরু করে। এভাবেই ধীরে ধীরে আলিবাবা সবার নজরে আসে এবং এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে গোল্ডম্যান স্যাক্স ও সফটব্যাংকের মতো নামী প্রতিষ্ঠান যখন আলিবাবা.কমে মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে তখনই প্রথম আলিবাবা দারুণ সফলতার মুখ দেখে। এর পর থেকে আলিবাবা শুধু লাভেরই মুখ দেখেছে। এবং জনপ্রিয় সব প্রতিষ্ঠানকে টপকে শীর্ষদিকে যাত্রা করেছে। এরপরে আলিবাবার আরেকটি বড় অর্জন ছিলো ২০০৫ সালে ইয়াহু যখন এক বিলিয়ন ডলারে আলিবাবার ৪০% শেয়ার কিনে নেয়। এতে ইয়াহু ও আলিবাবা উভয় প্রতিষ্ঠানই লাভবান হয়েছিলো।
এরপরের গ্রাফ সোজা, তখন থেকে আলিবাবা শুধু উত্থানই দেখেছে। যেই আলিবাবা.কম কোনোদিন নিজেদের বিনিয়োগের টাকাটাও তুলতে পারবে বলে কেউ বিশ্বাস করেনি তারাই এখন প্রতিদিন মিলিয়ন ডলারের লেনদেন করছে। এর পেছনে অনেক মানুষের শ্রম থাকলেও জ্যাক মা নিজের সন্তানের মতো এই প্রতিষ্ঠানকে লালন করেছেন। তাকে একবার টাইম ম্যাগাজিন পাগল বলে উপহাস করেছিলো। সেই হিসেবে বলতে হয় তিনি পাগলই হবেন, পাগল নাহলে শুন্য থেকে সাম্রাজ্য তৈরি করা কিভাবে সম্ভব! তিনি আজকের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা, তিনি জ্যাক মা একজন স্বপ্নদ্রষ্টা।