প্রস্তাবিত বাজেটকে সবাই ব্যবসাবান্ধব বাজেট হিসেবে অভিহিত করছেন। তবে ই-কমার্স খাতের একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি মনে করি, এবারের বাজেট ই-কমার্সবান্ধব হয়নি। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনার মধ্যে কমবেশি সব ধরনের ব্যবসা লোকসানের মুখে পড়েছে। এ সময়ে ই-কমার্স উদীয়মান ব্যবসা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মানুষের আগ্রহ ও নির্ভরতা বেড়েছে অনলাইন কেনাকাটায়।
ই-কমার্স ব্যবসা করতে গিয়ে আমরা নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছি। এ ব্যবসাকে এখনো কোনো শ্রেণিভুক্ত করা হয়নি। উদীয়মান ব্যবসা হিসেবে ই-কমার্সের ওপর থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হলে এটি মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্যতা পেত। আমরা কিন্তু সারা জীবনের জন্য সুবিধাটি চাচ্ছি না, নির্দিষ্ট কয়েক বছরের জন্য দাবি করেছি।
কোনো দোকান বা রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে ভ্যাটের চালান দেয়। ই-কমার্স ব্যবসায় সে ধরনের চালান দেওয়ার সুযোগ নেই। আবার আমি যে টাকায় পণ্য কিনলাম ও যে দামে বিক্রি করলাম, সেই মধ্যবর্তী মূল্য সংযোজনের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়ার কথা। কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচের কারণে সেটি হচ্ছে না। আবার কাগজপত্র সংরক্ষণ করাও অনেক সময় সম্ভব হয় না। এসব কারণে একদিকে যেমন আমাদের ভ্যাট দিতে ও নিতে সমস্যা হয়, অন্যদিকে ভ্যাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও একধরনের দূরত্ব বা অনাস্থা তৈরি হয়। অনেক সময় অযৌক্তিক জরিমানাও গুনতে হয় আমাদের।
আমার প্রতিষ্ঠানটি মূলত ই-কমার্স খাতের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা আছে। তবে সুন্দরবন, এসএ পরিবহনসহ কোনো কুরিয়ারই গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে না। অথচ ১০০ টাকার সেবা দিলে ১৫ টাকা ভ্যাট ঠিকই দিতে হয়। সে কারণে আমরা সাড়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট আরোপের দাবি করেছিলাম। সফটওয়্যার সেবা খাতে প্রতিষ্ঠানের অফিসভাড়ার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে। একইভাবে ই-কমার্স খাতে অফিসভাড়ার ওপর আমরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি করেছিলাম। কিন্তু বাজেটে তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
অন্যদিকে ই-কমার্স খাতে উৎসে করেরও কিছু বিষয়াদি রয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় করে, তাহলে ন্যূনতম কর দিতে হয়। আমরা ই-কমার্স খাতকে উৎসে করের আওতামুক্ত রাখতে অনুরোধ করেছিলাম। এফবিসিসিআইও আমাদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে আগামী ১ বছর ই-কমার্সকে উৎসে করমুক্ত রাখতে বলেছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আগামী এক বছরে ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। আমি মনে করি, সেটি সম্ভব। কারণ, সরকারের আইসিটি ডিভিশন বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যশোর, বরিশালের মতো জায়গায় হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে অনেক উদ্যোক্তাই বিনিয়োগ করেছেন। তা ছাড়া করোনায় অনেকের ব্যবসা বেড়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২০০ জন নতুন কর্মী নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব কর্মী পণ্য সরবরাহ নয়, আমাদের কার্যালয়ে কাজ করবেন। সব মিলিয়ে আমি মনে করি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন কর্মসংস্থানের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
# সৌজন্যেঃ প্রথম আলো