বর্তমান যুগ উদ্যোক্তাদের যুগ। এখন অধিকাংশ তরুণ-তরুণী অন্যের অধীনে চাকরি না করে বরং নিজের স্বাধীন ব্যবসায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তবে একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথটা খুব কঠিন। হাজারো চড়াই-উৎরাই, সময়, শ্রম ব্যয় করে তবেই সাফল্যের দেখা মেলে। উদ্যোক্তাদের এই বন্ধুর জীবন নিয়ে সিনেমা বানাতে হলিউড বেশ সরব। হলিউডে উদ্যোক্তাদের জীবনী নির্ভর বা উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করবে এমন বহু সিনেমা নির্মিত হয়েছে। এর মাঝে কিছু কিছু হয়েছে খুব জনপ্রিয়ও। চলুন তবে দেখে আসি এমনই কিছু হলিউডি সিনেমা যা তৈরি করা হয়েছে উদ্যোক্তাদের নিয়ে।
জয়
জয় এমন একটি সিনেমা যা উদ্যোক্তাদের সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছে অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স। সিনেমাটি জয় ম্যাঙ্গানো নামক একজন উদ্যোক্তার জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে। জয় ম্যাঙ্গানো “মিরাকেল মপ” বা অবিশ্বাস্য ঝাড়ু উদ্ভাবন করে বেশ নাম করেছিলেন। সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে একজন উদ্যোক্তার জীবনের উত্থান-পতন, কিভাবে নতুন কিছু শুরু করতে গেলে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এখানে একজন উদ্যোক্তার জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একদম বাস্তবিকতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে। আর নিজের সহজাত অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে জেনিফার লরেন্স সিনেমাটিকে মানুষের জীবনের অনেক কাছে নিয়ে এসেছেন।
দ্য ওল্ফ অব ওয়াল স্ট্রিট
জর্ডান বেলফোর্ট নামক একজন উদ্যোক্তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনের কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছিলো সিনেমাটি। একজন দর্শক কিংবা উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি এই সিনেমা থেকে ভিন্ন কিছুর স্বাদ পাবেন। কারণ সিনেমাটি শুধু উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা যোগাতে কিংবা উৎসাহিত করতে তৈরি হয়নি বরং একটু সাফল্যের দেখা পেয়ে তারা পথ ফসকে যেই ভুলগুলো করে বসেন সেই ভুলগুলোকে স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে। আরো দেখানো হয়েছে কিভাবে নিজের জোরালো বুদ্ধির জোরে সামান্য একজন স্টক ব্রকার থেকে জর্ডান বেলফোর্ট একটি ফার্মের প্রধান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং পরবর্তীতে দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে নিজের তৈরি সাম্রাজ্য হারাতে বসেন। ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও।
দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক
সিনেমাটি তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক নিয়ে। ছবিতে উঠে এসেছে মার্ক জাকারবার্গ ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে বর্তমানে সময়ে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় থাকা ফেসবুক নির্মাণের গল্প। একজন উদ্যোক্তা কোনো উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে আসলেই সবাই তা সাদরে গ্রহণ করেনা। এমনও সময় আসে যখন বন্ধুরা পরিণত হয় প্রতিদ্বন্দ্বীতে। আসলে একজন উদ্যোক্তা হওয়ার পথ কখনোই সহজ নয়। আর এই ব্যাপারগুলোই খুব সুন্দরভাবে ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’এ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জাকারবার্গ পৃথিবীর প্রথম তরুণ উদ্যোক্তা যিনি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় এত অল্প বয়সে বিলিয়নিয়ার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। এতদূর আসতে তাকে কতটা কাঠ-খড় পুড়াতে হয়েছে সিনেমাটি সে সম্পর্কে আপনাকে ধারণা দিবে।
অফিস স্পেস
একজন উদ্যোক্তা সাধারণত স্বাধীনচেতা হন। ১০-৫টার নিরামিষ জীবন তাদের পছন্দ না। এই সিনেমায় এমনই তিনজন ১০-৫টার গৎবাধা কর্মজীবনে বাঁধা তিনজন মানুষের গল্প বলা হয়েছে যারা নিজ কর্মক্ষেত্রে অসুখী। যারা তাদের এই ধরাবাঁধা একঘেয়ে জীবন মেনে নিতে পারছেন না আবার নিজে থেকেও কিছু করতে পারছেন না। ছকে সাজানো জীবনের এই টানাপোড়ন সিনেমাটিতে উঠে এসেছে। সিনেমাটি দেখলে বুঝতে পারা যায়, একজন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কর্পোরেট অফিসের ছকে বাঁধা জীবন কতটা হতাশা যোগায়।
ফরেস্ট গাম্প
সিনেমাপ্রেমীদের কাছে ফরেস্ট গাম্প সিনেমাটি কতটা প্রিয় তা বলাই বাহুল্য! টম হ্যাংকস অভিনীত এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে ধীরবুদ্ধি সম্পন্ন একটি সহজ সরল ছেলের কথা। ফরেস্ট গাম্প সিনেমাটি যে কোনো মানুষের জন্যই শিক্ষনীয় তবে উদ্যোক্তাদের জন্য ছবিটি একটু বিশেষ। ছবির মূল চরিত্র ফরেস্ট তার বুদ্ধি, ভাগ্য কিংবা কোনো ধরণের সাহায্য ছাড়াই শুধু বারবার চেষ্টা করার মাধ্যমে নিজের স্বাধীন ব্যবসা গড়ে তোলে। আর এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় নিজের ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টা একজন উদ্যোক্তার জন্য কতটা প্রয়োজনীয়।