মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ, টাঙ্গাইলের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছেন। লকডাউনে বিকাশের মাধ্যমে তিনি শখের বশে পরিচিতদের মাঝে মোবাইল রিচার্জ শুরু করেন। কিন্তু গ্রাহক বেড়ে যাওয়ায় পরিচিত একজনের কাছ থেকে এজেন্ট সিম সংগ্রহ করেন। তারপর মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম ও হুয়াটসঅ্যাপে কয়েকটি গ্রুপ খুলে ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা পরিচিতিদের অ্যাড করেন।
সিম কোম্পানিগুলো রিচার্জ এজেন্টকে বেশি টাকার লোডে প্রায় ২০০ টাকা বা তারও বেশি টাকা পর্যন্ত কমিশন দিয়ে থাকে যার একটি তালিকা কোম্পানি এজেন্টদের কাছে সরবরাহ করেন। জনাব ওয়াজেদ কমিশনের কিছু টাকা লাভ রেখে বাকীটা মূল এমাউন্ট থেকে বিয়োগ করে আরেকটি তালিকা করেন। এরপর তালিকাটি গ্রুপগুলোতে শেয়ার করেন। যা গতানুগতিক রিচার্জ দোকানগুলো দেয় না। ফলে গ্রাহক অপেক্ষাকৃত কম দামে খুব ভালো ভালো অফার পান। যেগুলোর মেয়াদ থাকে ৩০দিন। যারা একবার এমন অফার পান তারা নিয়মিতই নিতে থাকেন। প্রতিদিন আরো নতুন গ্রাহক যুক্ত করেন তিনি। তার গ্রুপগুলোতে বর্তমানে প্রায় ২৫০ সদস্য রয়েছেন। যার মধ্যে দেশ -বিদেশের অনেকেই নিয়মিত অফারগুলো কিনেন।
প্রতিমাসে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন বলে জানান তিনি। গত মে মাসে প্রায় বিশ হাজার এবং জুনে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা আয় করেছেন। এর মাধ্যমে প্রতিদিন সাধারণত তিনি ৫০০/৭০০/ ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। কোনো কোনো দিনে এত গ্রাহক পান যে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয় বলেও জানান তিনি।
“একজন সাধারণ ফ্লেক্সি দোকানদার মাসে যা বিক্রি করেন আমি একদিনেই তা বিক্রি করি। সারা বাংলাদেশ ও বিদেশ থেকেও অনেকেই আমাদের মাধ্যমে লোড নেন। আর আমরা যেরকম অফার দিতে পারি এই রকম তারা দিবে না। এজন্য আমাদের বিক্রির পরিমাণটা বেশি। ” তিনি দাবি করেন।
কেমন টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে জানতে চাইলে বলেন যে খুব একটা বিনিয়োগের দরকার পড়েনা। গ্রাহকদের কাছে বিক্রির পরও কোম্পানিকে টাকা পরিশোধ করা যায়।
এছাড়া তার মাধ্যমে অনেকেই এই ব্যবসাতে জড়াচ্ছেন এবং আয় করছেন। এমনই একজন নাঈম। তিনি জামালপুরের একটি কলেজে পড়াশোনা করছেন। তিনিও মেসেঞ্জারে গ্রুপ খুলে বন্ধুদের যুক্ত করে প্রতিদিন প্রায় ২০০/২৫০টাকা আয় করছেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি দেশ-বিদেশের পরিচিতদের কাছ থেকে ফোন পান মিনিট ও জিবি অফার বিক্রির। তিনি এটি শুরু করেছেন মাত্র ২০ দিন আগে। ক্রমেই তার গ্রাহক বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরুল হুদা টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলে এই ব্যবসা করছেন। তিনি গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে তার এজেন্টকে সরবরাহ করেন এবং সেখান থেকে তাকে ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। তার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২৫১।
আবু ইউসুফ নামের দশম শ্রেণির একজন ছাত্রও করছেন এই ব্যবসা। পরিচিত একজনের কাছ থেকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে একমাস আগে মিনিট ও জিবি অফার নেন তিনি। তিনি খেয়াল করেন যে পরিমাণ টাকা রিচার্জ করে অফার দিয়েছেন তার চেয়ে ১০০ টাকার অধিক টাকা কম নেন। তিনি একটু আশ্চর্য হয়ে তার কাছে জানতে চান। লোকটি তাকে বিস্তারিত জানান এবং ইউসুফও ব্যবসা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর থেকে ইউসুফের মেসেন্জারে গ্রুপ তৈরী করে যাত্রা শুরু হয়। দেশ -বিদেশের অনেকেই তার কাছ থেকে অফারগুলো নিচ্ছেন।
শুধু যে উপরের চারজনই এভাবে আয় করছেন তা নয়। আবু ইউসুফ জানান তার পরিচিত একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে নব্বই হাজারের উপর এরকম ব্যবসায়ী যুক্ত আছেন। নুরুল হুদা জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই এই ব্যবসায় জড়িত আছেন। আব্দুল ওয়াজেদ বলেন যে অনেক মানুষ গ্রুপ খুলে তার পার্টটাইমে এরকম ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করছেন।
এভাবে করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে উপার্জন করছেন। নিজের খরচ যোগানোর পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিক সহযোগিতা করছেন।