অন্যান্য বছর শীতকালে সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম থাকলেও এবার এর চিত্র পুরোটাই উল্টো। শীতের ভরা মৌসুমেও সবজির বাজার যাচ্ছে চড়া। বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়তি নয়। এদিকে, ভরা মৌসুমে সবজির পাশাপাশি সব ধরনের মাছ, মাংস, মুরগির দামও অনেক বেশি। এছাড়া, সরকার গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও কে শোনে কার কথা! ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বর্তমানে ৭৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করছেন দোকানিরা।
বাজারে সবকিছুর এমন চড়া দামে ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন অন্য কথা। তাদের দাবি, মৌসুমের শুরুতে আকস্মিক বৃষ্টিতে অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া, কয়েকদিনের অতিরিক্ত শীতে কৃষক ফসল তুলতে পারেনি, ফলে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে সবজির দাম।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চড়া দামের চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষিরা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকি প্রতি মুঠো ২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, সাধারণ শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আর বিচিওয়ালা লাল শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাল আলু প্রতি কেজি ৭০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ব্রুকলি প্রতিটি ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবে কমে যায় গরুর মাংসের দাম। সেই সময় দাম কমে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয় ৬০০ টাকায়। পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে, বাজারে সরকারের এ নির্দেশনা মানার কোনো বালাই নেই। বর্তমানে দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়।
সেইসঙ্গে, ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। আর প্রতি কেজি কক ও লেয়ার ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, কিছু দিন ধরেই বাড়তি যাচ্ছে সব ধরনের মাছের দাম। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ছোট টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও শোল মাছ প্রতি কেজি ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শীতের ভরা মৌসুমে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজ উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছর শীতের সময় সব ধরনের সবজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি থাকে। তবে এ বছর ভরা মৌসুমে সব ধরনের সবজি কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য বছরের এ সময়ে শিমের কেজি থাকে ৩০ টাকা, অথচ এবার আমাদের কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকায়। বেগুন গত সপ্তাহে কিনছি ১০০ টাকায়, আজ কিনতে হলো ৮০ টাকায়। সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে ভরা মৌসুমেও অতিরিক্ত দাম নেয়া হচ্ছে। এতে করে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের এবং সাধারণ ক্রেতারা।
একই অভিযোগ জানিয়ে গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে বাজার করতে আসা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাজারে সব সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি। এর সঙ্গে সব ধরনের মাছের দাম এতই বেড়েছে যে, কেনার কোনো উপায় থাকে না। নানান অজুহাতে সবসময়ই বাড়তি যাচ্ছে মাছের বাজার। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, শীতের সময় সবজির দাম থাকবে সবচেয়ে কম… অথচ এই সময় এসে সব ধরনের সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি।
ভরা মৌসুমেও কেন সবজির দাম এত বেশি? এ বিষয়ে একই বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই হঠাৎ আকস্মিক বৃষ্টিতে ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। এছাড়া, কয়েকদিনের তীব্র শীতের কারণে কৃষকরা ক্ষেত থেকে ফসল তুলতে পারেনি। যে কারণে ঢাকার বাজারে সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
তিনি বলেন, মূলত কিছুদিন আগের আকস্মিক বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায় এবার ভরা মৌসুমে এসেও সবজির দাম কিছুটা বাড়তে যাচ্ছে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় সবজি নিয়ে আসার পরিবহন খরচ এবং বিভিন্ন অদৃশ্য খরচগুলোর কারণে সবজির দাম এবার একটু বেশি।