বগুড়ার এসওএস শিশুপল্লির (এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজেস) সুফলভোগী একঝাঁক শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার বগুড়া শহরের বারপুর এলাকায় সামাজিক সংস্থাটির কার্যালয়ে প্রশিক্ষণদাতা তিনটি রিসোর্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ১০০ তরুণ-তরুণীকে উদ্যোক্তা তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়।
বেলুন উড়িয়ে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান। এসওএস শিশুপল্লির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে এমআইটি পার্ক লিমিটেড, সুকন্যা বিউটি পারলার, সেলুন অ্যান্ড স্পা ও সাইক গ্রুপ।
এর মধ্যে এমআইটি পার্ক লিমিটেড এসওএস শিশুপল্লির সুফলভোগী তরুণদের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় বাড়ানো ও তথ্যপ্রযুক্তিতে আত্মকর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি করে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দেবে। সুকন্যা বিউটি পারলার ও সেলুন অ্যান্ড স্পা এসওএস শিশুপল্লির সুফলভোগী তরুণীদের রূপচর্চা, স্পা ও সেলুন সেবার প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ বিউটিশিয়ান হিসেবে গড়ে তোলা ও বিউটি পারলার স্থাপনে কারিগরি সহায়তা দেবে। শিল্প উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী তরুণ-তরুণীদের বেকারি পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দেবে সুকন্যা। এ ছাড়া গাড়ি চালানো, ইলেকট্রিক হাউস ওয়্যারিং, মোবাইল সার্ভিসিং, এসি ও রেফ্রিজারেটর সার্ভিসিংসহ কারিগরি প্রশিক্ষণ দেবে সাইক গ্রুপ।
তরুণ প্রজন্মকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক শ্রমবাজারে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে, পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান করতে এবং উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করার জন্য এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড বেসিক স্কিল ট্রেনিং প্রকল্পের অধীনে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান বলেন, যুবকদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ইংরেজির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এতে কর্মসংস্থানের প্রতিযোগিতার বাজারে পৃথিবীর কেউ তাঁকে ঠেকাতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে নিজেকে গড়ে উঠতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা একধরনের বেকারত্ব তৈরি করে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কোনো তরুণ-তরুণী বেকার থাকেন না। এসএসও শিশুপল্লির উদ্যোগে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলবেন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এসওএস শিশুপল্লি বাংলাদেশ অংশের পরিচালক মো. এনামুল হক। এসওএস শিশুপল্লির বগুড়ার পরিচালক মো. আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বগুড়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিব হাসান চৌধুরী ও সুফলভোগী শিক্ষার্থী মরিয়ম আকতার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিবার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের সুফলভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দিনা আমান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সুকন্যা বিউটি পারলার ও স্পা অ্যান্ড সেলুনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশরাত জাহান, যশোপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর প্রমুখ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে অনেক শিশু মাতৃ-পিতৃহীন হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন অস্ট্রিয়ার নাগরিক অধ্যাপক হারম্যান মেইনার। তিনিও ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছেন। বড় হয়েছেন বোনের কাছে। কীভাবে অনাথ সন্তানদের পরিবারে রেখে মানুষ করা যায়, বিষয়টি নিয়ে তাঁর ভাবনার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৪৯ সালে অস্ট্রিয়ায় এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজেস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। যা বাংলাদেশে এসওএস শিশুপল্লি হিসেবে পরিচিত। ১৯৭২ সাল থেকে সংস্থাটি বাংলাদেশে পরিচালিত হয়ে আসছে। হারম্যান মেইনার তহবিল ও বিশ্বব্যাপী অসংখ্য শুভানুধ্যায়ীদের সহায়তায় বেড়ে উঠেছে সংস্থাটি। বর্তমানে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও সিলেটে এর কার্যক্রম চলছে। এসওএস শিশুপল্লি ১৯৯৫ সাল থেকে বগুড়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।