পোশাকে হাতের কাজ বলতে একটা সময় শুধু সুঁই সুতার নকশাকেই বোঝানো হত। তবে এখন শুধু সুঁইয়ের খোঁচায় সুতার রংয়ে বোনা ফুল, পাখি অথবা বাহারি নকশা নয়, কাপড়ের সৌন্দর্য বর্ধণ করতে শিল্পীর রং তুলির জনপ্রিয়তাও কম নয়। তেমনি রং আর তুলির স্পর্শে নকশা এঁকে পোশাক বর্ণিল করে তুলছেন তাহমিনা আক্তার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
গতবছর করোনার শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে পরিবারের কাছে কুমিল্লায় চলে যান। অবসর সময়টা নিজের শখের কাজ করতেন। এর মধ্যে রান্না ছিলো অন্যতম। একদিন হুট করে নিজের একটা টিশার্টের কাপড়কেই ক্যানভাস হিসেবে বেছে নেন, রং দিয়ে আঁকিবুঁকি করে ফেললেন। বাহারি রং এর পাতা দিয়ে করেছিলেন, নিজের কাছেই সুন্দর মনে হলো তার। এরপর নিজের দুটো হ্যান্ড ব্যাগে এবং শেষে নিজের ভাইয়ের পাঞ্জাবিতে রঙ করেন। সেই কাজগুলো ফেসবুকে দেওয়ার সুবাদে সবার ইতিবাচক সাড়া মিলে। তাহমিনা বলেন,যেহেতু আমার করা ডিজাইন গুলো সবাই অনেক পছন্দ করে, এরপর ভাবলাম নাহ এভাবে তো ছেড়ে দিতে পারি না। এটাকে নিয়েই কিছু চিন্তা করা যাক,যেই ভাবা সেই কাজ! ফেসবুকে একটা পেইজ খুলে ফেললাম। নাম দিলাম ‘তাহমিনা’স ক্রিয়েশন’ (Tahmina’s Creation)।
আঁকাআকির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাহমিনার। তবুও তার আঁকা মন ছুঁয়ে যায় সবার। পছন্দের কাপড়ে নকশা আঁকিয়ে নেন ক্রেতারা। এভাবেই তাহমিনার কাজগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। তাহমিনা বলেন, ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিলো। কিন্তু কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেয়া হয় নি কখনো। নিজে নিজেই টুকটাক যা পারতাম চেষ্টা করতাম। লকডাউনে বাসায় বসে থেকে এই সময়টাকে নিজের শখের কাজ করেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম,তখনো এরকম পাঞ্জাবি ডিজাইন এর চিন্তা মাথায় আসে নি। এখন তো পুরোপুরি পাঞ্জাবিতেই নকশা করছি। আমি সবসময়ই চেষ্টা করি পাঞ্জাবিতে ইউনিক কোন ডিজাইন করতে এবং তা নিঁখুত ভাবে ফুটিয়ে তুলতে।
কাজের অর্ডার কিভাবে পান? তাহমিনা বলেন, মূলত আমার আইডি এবং পেইজে নিয়মিত সব কাজের ছবি শেয়ার করি। সেখান থেকেই বেশিভাগ অর্ডার পাই। তবে পরিচিত আর বন্ধুদের পাশাপাশি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো আছেনই। প্রতি মাসে ৭-৮ হাজার টাকার নকশা আঁকেন বলে জানান তাহমিনা। প্রতি কাজের জন্য তিনি কাপড় ভেদে নেন ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকা।
তাহমিনা জানালেন, আমার বন্ধুদের কাছ থেকে ঠিক যেমনটা আশা করেছিলাম তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি সহযোগিতা পেয়েছি। তারজন্য সবার কাছেই আমি অনেক কৃতজ্ঞ। আমার প্রথম এবং অধিকাংশ কাস্টমারই আমার বন্ধু। বিশেষ করে কাজগুলো হাতে পেয়ে যখন সবার সুন্দর সুন্দর মন্তব্য পাই তখন নিজের প্রতি অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।
আগামী দিনে নিজের পড়াশোনা এবং কাজ নিয়ে আশার কথা শোনালেন তাহমিনা। তার মতে, পড়াশোনার পাশাপাশি এবং সৌখিন কাজ করা খুবই সহজ বলে মনে করি। অন্তত পড়াশোনার ক্ষতি নয় বরং সময়টা সৃজনশীল কাজে ব্যয় হচ্ছে। কঠিন সময়ে নিজের ভালো লাগার কাজ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে অনিহা তার। বললেন, সব ঠিক রেখে চলতে চাই নিজের মতো করে।