সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড তুরস্কের কচ গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপের উদ্যোগে একটি সংবাদ সম্মেলনে আর্চেলিক-এর সহযোগিতায় নিজেদের রূপকল্প ‘ট্রান্সফর্ম ফর গ্রোথ’ বা ‘উন্নতির লক্ষ্যে রূপান্তর’-এর উন্মোচন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আর্চেলিক-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার জেমাল জান ডিনচার, সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও, এম.এইচ.এম ফাইরোজ এবং আর্চেলিক-এর ডিরেক্টর সাউথ এশিয়া রিজিওনাল মার্কেটিং, বিজনেস ট্রান্সফর্মেশন অ্যান্ড গ্রোথ, মিস হান্দান আব্দুর রহমানোউলু সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর উল্লেখযোগ্য রূপান্তরের ঘোষণা দেন।
নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিঙ্গার বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করবে; যার মধ্যে রয়েছে কনজ্যুমার ডিউরেবলস ইন্ডাস্ট্রিতে অনন্য একটি কনসেপ্ট স্টোর, বিশ্বমানের একটি কর্মস্থলে প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর এবং একটি অত্যাধুনিক উৎপাদন কারখানা চালু করা। সিঙ্গার বাংলাদেশের লক্ষ্য কচ গ্রুপ এবং আর্চেলিক-এর বৈশ্বিক দক্ষতা এবং তুরস্কের মান বাংলাদেশে নিয়ে আসা এবং ভোক্তাদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করা, যা সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর উৎকর্ষের জন্য প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যক্ত করে।
সিঙ্গার-এর এই পরিবর্তনের সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে জেমাল জান ডিনচার বলেন, ‘সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর আছে ১১৮ বছরের ইতিহাস এবং সিঙ্গারই দেশে কনজ্যুমার ডিউরেবলস ইন্ডাস্ট্রিতে অগ্রগামী। সিঙ্গারকে দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিয়ে ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে পরিবর্তন করছি। সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর যাত্রায় ‘উন্নতির লক্ষ্যে রূপান্তর’ চালু করা একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নতুন কনসেপ্ট স্টোর, নতুন কর্পোরেট অফিস এবং আমাদের উৎপাদন কারখানায় বিনিয়োগ এই পরিবর্তনের সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ। ভবিষ্যতেও উদ্ভাবনী শক্তি, গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক দক্ষতা এবং বিশ্বমানের পণ্য বাজারে নিয়ে আসছি যাতে কনজ্যুমার ডিউরেবলস ইন্ডাস্ট্রিতে এবং বাংলাদেশি জনগণের জীবনে অবদান রাখা যায়। নতুন সদর দপ্তর আমাদের কর্মীদের আর্চেলিক-এর আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্রের মান এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সহায়তা করবে। আমাদের কনসেপ্ট স্টোরটি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পুরস্কার বিজয়ী আর্চেলিক স্টোর ডিজাইন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে। ব্যবসার খুচরা এবং বাণিজ্যিক পরিবর্তনে আমরা তুরস্ক থেকে যা শিখেছি তা বাংলাদেশে প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি এবং আমি বাংলাদেশে এই নতুন যাত্রার সাথে যুক্ত হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। আমরা সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো এবং বাংলাদেশকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার একটি কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়েছি। আমরা দীর্ঘ মেয়াদে এই অঞ্চলের দেশগুলোতে বাংলাদেশের কারখানা থেকে পণ্য রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছি। আমরা সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর টেকনোলোজি, স্টোর এবং কমিউনিকেশনে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব।’
সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এম.এইচ.এম ফাইরুজ বলেন, ‘অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে, আমাদের গ্রাহকদের জীবনযাত্রার মানও পরিবর্তন হচ্ছে। গ্রাহক সেবার লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে, সিঙ্গার বাংলাদেশ গ্রাহকদের কাছে সবচেয়ে সমসাময়িক ও বিশ্বমানের সেবা নিয়ে আসার জন্য তার কার্যক্রম রূপান্তর করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে কনজ্যুমার ডিউরেবলস ব্যবসায় সিঙ্গারই অগ্রগামী। ভোক্তাদের মনে আমাদের ওপর দৃঢ় ভরসার জেরে, আমরা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কনজ্যুমার ডিউরেবল পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য রাখি।’
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পুরস্কার বিজয়ী আর্চেলিক কনসেপ্ট স্টোরের ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, সিঙ্গার বাংলাদেশ গুলশান ১-এ কনজ্যুমার ডিউরেবলস ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের প্রথম কনসেপ্ট স্টোর উদ্বোধন করেছে। স্টোরটিতে সিঙ্গার ও বেকো ব্র্যান্ডের অধীনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রদর্শনের জন্য বিশেষ এক্সপেরিয়েন্স জোন রয়েছে।
বেকো ইউরোপের শীর্ষ ৩ ব্র্যান্ডের মধ্যে একটি। স্টোরটির অসাধারণ রিটেইল অভিজ্ঞতা; পণ্য ক্রয়ের আগে সেটি যাচাই-বাছাই করার সুযোগ দিচ্ছে। এই স্টোরে প্রথমবারের মত আর্চেলিক-এর গ্লোবাল ব্র্যান্ড বেকোর শপ-ইন-শপ রাখা হয়েছে। সিঙ্গার-এর নতুন কনসেপ্ট স্টোরের ডিজাইন বাংলাদেশের খুচরা পণ্য বিপণন কেন্দ্রের জন্য একটি নতুন মান নির্ধারণ করার পাশাপাশি চিরাচরিত খুচরা ব্যবসার ধরনকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করবে এবং ক্রেতাদেরকে বিশ্বমানের রিটেইল এক্সপেরিয়েন্স নিশ্চিত করবে। দেশব্যাপী প্রধান শহরগুলোতে সিঙ্গার আরও বেকো কনসেপ্ট স্টোর খুলবে এবং ২০২৪ সালে দেশব্যাপী সিঙ্গার আউটলেটগুলোতে এই ডিজাইন অবলম্বন করা হবে।
সিঙ্গার বাংলাদেশ তার কর্পোরেট হেডকোয়ার্টার ঢাকার গুলশান ২-এ স্থানান্তরিত করছে। তুর্কি স্থপতিদের দ্বারা ডিজাইন করা, এই অত্যাধুনিক অফিসটি কর্মীদের বিশ্বমানের কর্মক্ষেত্র এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে। নতুন এই অফিসে কর্মীদের একতা, সহযোগিতা, সৃজনশীলতা এবং সপ্রতিভ চিন্তাশীলতাকে উৎসাহিত করবে। নতুন প্রধান কার্যালয়টি সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর প্রগতিশীল নীতিকে ধারণ করে ক্রমাগত সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করবে।
সম্মেলনে সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর নতুন কারখানা উৎপাদন শুরু করার জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর্চেলিক-এর ৭৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত নতুন কারখানাটি ৪০০০ এরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে এবং স্থানীয় উৎপাদনে কোম্পানির প্রতিশ্রুতিকেও ছাড়িয়ে যাবে। সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর লক্ষ্য হল ৯০% এর বেশি পণ্য দেশেই উৎপাদন করা, আমদানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করা এবং একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরবরাহকারী ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় টেকসই হওয়ার জন্য সিঙ্গার ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টটি লিড গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তৈরি করা হচ্ছে।