নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি)। বাজারেরও প্রত্যাশা ছিল যে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হবে, কারণ, ইউয়ান নিম্নমুখী থাকায় মুদ্রানীতির রাশ আলগা করার অবকাশ ছিল না চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এর আগে গত সপ্তাহে পিবিওসি বাজারকে বিস্মিত করে মধ্যমেয়াদি ঋণের সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অসম হওয়া ও মূল্যহ্রাসের চাপ থাকার কারণে ঋণের প্রকৃত ব্যয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজের অবস্থানে অবিচল।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভান্স পিচার্ড ইউয়ানের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বিগ্ন। তিনি মনে করেন, এ পরিস্থিতিতে নীতি সুদহার কমানো হলে ইউয়ানের দর আরও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, পিবিওসি যা এড়াতে চায়। সে কারণে তারা এখন কোয়ান্টিটেটিভ ইজিংয়ের (বাজার থেকে সিকিউরিটিজ কিনে অর্থ সরবরাহ করা) দিকে যেতে পারে।
এক বছর মেয়াদি লোন প্রাইম রেট (এলপিআর) ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে এবং পাঁচ বছর মেয়াদি এলপিআর ৪ দশমিক ২০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। গত সপ্তাহে ২৭ জন বাজার পর্যবেক্ষককে নিয়ে করা রয়টার্সের জরিপে একজন বাদে সবাই বলেন, এলপিআর অপরিবর্তিত থাকবে।
চীনের অধিকাংশ বকেয়া ঋণ এক বছর মেয়াদি এলপিআর। তবে মর্টগেজ বা বন্ধকি ঋণে পাঁচ বছর মেয়াদি এলপিআরের প্রভাব আছে।
এদিকে নতুন বছরের শুরুতে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের দরপতনের আশঙ্কা আবারও বেড়েছে। মূলত মার্কিন অর্থনীতিতে চাঙা ভাব থাকার কারণে এবং ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
অনশোর ইউয়ানের দর চলতি বছর এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে, ফলে দুই মাসের মধ্যে তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
জুলিয়ান ইভান্স প্রিচার্ড বলেন, ইউয়ানের দর কিছুটা বাড়লে চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিগগিরই নীতি সুদহার কমাবে বলে তিনি আশা করছেন। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মধ্যে নীতি সুদহার অন্তত ২০ ভিত্তি পয়েন্ট কমানো হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
গত বছর এক বছর মেয়াদি এলপিআরের সুদহার ২০ ভিত্তি পয়েন্ট আর পাঁচ বছর মেয়াদি এলপিআরের হার ১০ ভিত্তি পয়েন্ট কমানো হয়েছিল।
চান্দ্র নববর্ষের আগে পিবিওসি বাজারে আরও তারল্য সরবরাহ করবে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকেরা। উৎসবের সময় মানুষের অর্থের চাহিদা বেড়ে যায়, সে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পথে হাঁটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোলাবাজারের ক্ষেত্রে পিবিওসি রিভার্স রেপো পদ্ধতি প্রয়োগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংকের রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট রেশিও বা নগদ জমার অনুপাতও কমানো হতে পারে।