কড়াকড়ি আরোপের ফলে গত অর্থবছর অক্টোবরে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। এর পর থেকে চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর নভেম্বর পর্যন্ত টানা ১৪ মাস ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি চলছে আমদানিতে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে আমদানি কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। পাশাপাশি এ সময়ে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে ১৪ শতাংশ এবং এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর প্রথম পাঁচ মাসে মোট আমদানি হয়েছে ২৭ দশমিক ৭৬২৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত অর্থবছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ১৫১৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ পাঁচ মাসে আমদানি কমেছে সাত দশমিক ৩৮৮৭ বিলিয়ন ডলার তথা ২১ দশমিক ০২ শতাংশ। তবে পাঁচ মাসের মধ্যে কোনো মাসেই আমদানির পরিমাণ ছয় বিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর আমদানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ঋণাত্মক ছিল আগস্টে। ওই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ২৪৭৬ বিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছর একই মাসে এর পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ৩৭৫৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগস্টে আমদানি প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ঋণাত্মক ছিল। পরের মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, যা ছিল ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। ওই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ২৭৭২ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ১৯১৯ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে গত নভেম্বরে দেশে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ৮৯০৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই মাসে এর পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ৫৯১৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমদানি কমেছে এক দশমিক ৭০০৮ বিলিয়ন ডলার বা ২২ দশমিক ৪০ শতাংশ। চলতি অর্থবছর অপর দুই মাসের মধ্যে জুলাইয়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল ১৫ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং অক্টোবরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাঁচ মাসে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে চাল আমদানি কমেছে ৯৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। মূলত ধান উৎপাদনে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় চাল আমদানি শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। সামান্য কিছু সুগন্ধি চাল আমদানি হয়েছে পাঁচ মাসে। আর এ সময়ে গম আমদানি কমেছে ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
খাদ্যশস্যের পাশাপাশি অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানিও কমেছে চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে। যদিও এ সময় চিনি আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছর ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানি কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে চিনি আমদানি বেড়েছে ৮৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর আমদানি বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। পাঁচ মাসে এর আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। তবে তুলা আমদানি কমেছে ৪১ দশমিক ২৭ শতাংশ, সুতা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য সাড়ে ১৫ শতাংশ এবং অন্যান্য মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এর বাইরে চলতি অর্থবছর মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। মূলধনি পণ্যের মধ্যে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমেছে ২১ শতাংশের কিছু বেশি এবং অন্যান্য মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ। উল্লিখিত খাতগুলোর বাইরে অন্যান্য পণ্য আমদানি কমেছে সাত দশমিক ৮৬ শতাংশ।