ডিসেম্বরে ৪.৯০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে এলসি খোলার পরিমাণ ৭ শতাংশ কমেছে। গত জুনে ৪.৮৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
গত কয়েক মাস ধরে আমদানি কমার কারণে ডিসেম্বরে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি হয়েছে ৪.৫৩ বিলিয়ন ডলারের, যা ৩৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের নভেম্বরে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল সর্বনিম্ন ৪.৪১ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকাররা বলছেন, বছরখানেক ধরে গড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় অনেক চাপ কমে এসেছে। ডিসেম্বরে মূলত পরিশোধের চাপ কম থাকার কারণে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে। ব্যাংকগুলো এখন সাইট ও ডেফার্ড, দুই ধরনের এলসিই খুলছে। গত দুই মাসে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ভালো থাকার কারণে ব্যাংক খাতে এখন ডলারের তারল্য পরিস্থিতি ভালো। তাই ব্যাংকগুলো এখন ডেফার্ড এলসির পাশাপাশি সাইট এলসিও খুলছে।
কোনো সাইট এলসি খোলা হলে সেটির দায় এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে হয়। ব্যাংকগুলোর হাতে ভালো ডলার তারল্য থাকলে তারা সাইট এলসি খুলে থাকে। অন্যদিকে, ডেফার্ড এলসি খোলা হলে সেটির দায় পরিশোধের জন্য ৯০ থেকে ১৮০ দিন সময় পাওয়া যায়। ব্যাংকগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেফার্ড এলসি খুলে আমদানি করে থাকে। অর্থাত্ ডিসেম্বরে যেসব এলসির দায় পরিশোধ করা হয়েছে, সেগুলোর একটি বড় অংশের আমদানি এলসি খোলা হয়েছে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-নভেম্বর সময়কালে ভোগ্যপণ্যের জন্য এলসি খোলার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ শতাংশ কমেছে। এছাড়া এই সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্যে জন্য এলসি খোলা কমেছে ১৭ শতাংশ।
বেশ কয়েকটি শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের এমডিরা বলেন, ব্যাংকগুলোতে আগের মতো ডলার-সংকট না থাকলেও তারা নতুন এলসি খোলার আগে এলসি পেমেন্টের নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকছে। এর ফলে আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলে, জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ব্যবসায়ীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন। এসব কারণে নতুন করে বিনিয়োগে তাদের আগ্রহ ছিল কম। তাই নির্বাচনের আগের মাস ডিসেম্বরে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি এলসি খোলা বেশ কমেছে। তারা আরো বলেন, দেশের ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে সৃষ্ট ডলার-সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি অনেকটা কমাতে বাধ্য হয়েছেন। তবে জাতীয় নির্বাচন শেষ হওয়ায় আগামী মাস থেকে ধীরে ধীরে আমদানি এলসি খোলা বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি হয়েছিল ৯৬ টাকায়। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ডলার দাম বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়। টাকার এই অবমূল্যায়নের কারণে এলসি পরিশোধের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তবে ডলার কিনতে ব্যবসায়ীদের ১২২-১২৩ টাকা পর্যন্ত দাম দিতে হচ্ছে।