দেশে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। ঘর-গৃহস্থালিতেও এর ছোঁয়া লাগছে। এ কারণে দিন দিনই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের চাহিদা বাড়ছে। বাড়ি কিংবা অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে দেয় এমন প্রতিষ্ঠানও দেশে গড়ে উঠেছে। ইন্টেরিয়র স্টুডিও এমন একটি প্রতিষ্ঠান। ইন্টেরিয়র স্টুডিও ডিজাইনের কাজ শুরু করার আগে বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে নেন; তারপর তৈরি করেন স্টাইলিশ, আরামদায়ক আবেদনের সাজসজ্জা যা গৃহকে দেয় স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক সৌন্দর্য্যরে অনুভূতি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লিয়াকত আলী চাকলাদার মারুফ। তিনি যেমন সুশিক্ষিত তেমনি একজন সফল উদ্যোক্তা। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এই উদ্যোক্তা দেখিয়েছেন কিভাবে শক্ত মনোবলের দ্বারা অসাধ্যকে সাধন করা যায়।
তিনি এমন এক ইন্ডাস্ট্রিতে তার পদচিহ্ন রেখেছেন যেখানে প্রতিটা পদক্ষেপেই রয়েছে চ্যালেঞ্জ। তিনি দেখিয়েছেন কোন কিছুতে মন থেকে লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই।তিনি তার সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ইন্টেরিয়র ইন্ডাস্ট্রির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন। দিয়েছেন আশার বাণী ও সঠিক পরামর্শ। বলেছেন তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনের গল্প।কথা বলেছেন আমাদের তরুণ প্রজন্ম নিয়ে , বলেছেন তাদের সম্ভাবনার কথা। উদ্যোক্তা হতে গেলে কি করনীয়, কি ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয় এবং একজন তরুণকে কি কি পদক্ষেপ নিয়ে কাজ শুরু করলে সে সফলতা অর্জন করতে পারে এসব বিষয় নিয়েও খোলামেলা মত প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই সাথে তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ ও ব্যক্ত করেছেন এই সাক্ষাৎকারে।
প্রশ্নঃ শুরুতেই জানতে চাই আপনার ছোট বেলা সম্পর্কে
লিয়াকত আলী চাকলাদার মারুফ : ছোট বেলার কথা মনে পড়লেই এক অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করে। একটা মানুষের জীবনে তার ছোট বেলাই সব থেকে মজার সময়। আমার ছোট বেলা নিঃসন্দেহে অসাধারন কেটেছে। আমার জন্মস্থান মাদারীপুর হলেও বেশি সময় সেখানে কাটানোর সৌভাগ্য আমার হয়ে ওঠেনি। পারিবারিক কারনে শৈশবেই আমাকে মাদারীপুর ত্যাগ করে ঢাকায় পাড়ি জমাতে হয়।
ঢাকায় গিয়ে নতুন স্কুলে আমাকে ভর্তি করানো হয়, সেখানের পরিবেশের সাথেও আমাকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। মধ্যবৃত্ত পরিবারের গার্ডিয়ানরা সাধারণত খুব কনজারভেটিভ হয়ে থাকে। আমার পরিবারও তার ব্যতিক্রম ছিলো না। বেশ কড়া শাসন ও বাঁধা নিষেধের মধ্যে আমাকে বড় হতে হয়েছে। হয়তো সেই কারনেই আমার জীবনের অর্জনগুলো সম্ভব হয়েছে।
একটা অজপাড়া গ্রামে যেহেতু জন্ম হয়েছে ,গ্রামে ছেলেবেলা কাটানোর যে প্রকৃত মজা সেটা আমি খুব ভালভাবেই পেয়েছি। আবার পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শহরে করার জন্য শহরটাকেও কাছ থেকে দেখেছি। সব মিলিয়ে এক মিশ্র অভিজ্ঞতা বলা যেতে পারে। পড়াশোনায় আমি কখনোই অনেক ভাল স্টুডেন্ট ছিলাম না। কোনরকম পরীক্ষার কিছুদিন আগ থেকে পড়াশোনা করে সবসময় পাশ করেছি। যতটুকু পেরেছি চেষ্টা করেছি মুখস্থ বিদ্যা বাদ দিয়ে বুঝে বুঝে পড়ার। ২০০৪ সালে আমি মেট্রিক পাশ করি। পড়াশোনায় মনোযোগ কম থাকলেও প্রাকটিক্যাল কাজ কর্মে আমার ছিল বেশ আগ্রহ। মানুষের সাথে কথা বলতে ও মিশতে খুব পছন্দ করতাম আমি। গুছিয়ে কথা বলার একটা প্রবণতা আমার মধ্যে ছোট বেলা থেকেই ছিল, যার কারনেই অল্পেই আমাকে মানুষ বেশ পছন্দ করত।
প্রশ্নঃ আপনার ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু হলো কিভাবে?
লিয়াকত আলী চাকলাদার মারুফঃ অনার্স শেষ হওয়ার আগেই অর্থাৎ গ্রাজুয়েশন চলাকালীন অবস্থায়ই আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়। মনে পড়ে তখন আমি দ্বিতীয় বর্ষ পার করে তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করলাম, মাথার মধ্যে ক্যারিয়ার গোছানোর ব্যাপারটি এলো তখনই প্রথম। ভাবলাম আর তো মাত্র ২ বছর! এখন কিছু না ভাবলে আর কখন? তো ভাবনা অনুযায়ী বিডি জব’স ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারলাম। সিভিটাকে আর একটু ঘষামাজা করে বেশ কিছু কোম্পানিতে সিভি ড্রপ করলাম, পাশাপাশি কিছু কিছু কোম্পানির এড্রেস জোগাড় করে সেখানে সিভির হার্ড কপিও কুঁড়িয়ার করে দিলাম। ২-৩ মাসের মধ্যেই ফলাফল পেলাম। বেশ কিছু কোম্পানি থেকে ইন্টার্ভিউ এর জন্য ডাক পেলাম। আমার ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১০ সালে একটি স্বনামধন্য রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে যোগদানের মাধ্যমে।
কোম্পানিতে যোগদানের জন্য আমাকে প্রথম যে ইন্টার্ভিউটি দিতে হয় তা আমার কাছে সারাজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথম ইন্টার্ভিউতে আমার ইন্টার্ভিউ সুদীর্ঘ ৫৮ মিনিট যাবৎ নেওয়া হয়। আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই যে, কিভাবে আমি এতটা সময় এতগুলো মানুষের সামনে কথা বললাম! আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেতে আরও ২ দিন ২ টি ইন্টার্ভিউ এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, দ্বিতীয়টি ২০-২৫ মিনিট এবং সর্বশেষ ১০ মিনিটের ইন্টার্ভিউ দেওয়ার পর আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাই। এই ইন্টার্ভিউটি আমার জীবনের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
প্রশ্নঃ আপনার পেশা জীবন তো চাকরীর মাধ্যমে শুরু, চাকরি ছেড়ে কেন আপনি উদ্যোক্তা হতে চাইলেন?
লিয়াকত আলী চাকলাদার মারুফঃ হ্যাঁ আমি আমার পেশা জীবন চাকরীর মাধ্যমে শুরু করি এবং এই চাকরী থেকে অর্জিত অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা আমাকে উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করেছে। আমি মনে করি, একজন ব্যাক্তির ক্যারিয়ার যদি ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে হয়ে থাকে তবে তার উদ্যোক্তা হওয়ার পথটি আরও সুগম হয়।
উদ্যোক্তা হওয়ার আগে আমি আনুমানিক ৪-৫ বছর চাকরী করেছি। এই চাকরী করার মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি, একটা বড় কোম্পানি কিভাবে পরিচালিত হয়, একটা বড় কোম্পানির কোন ডিপার্টমেন্টগুলো কিভাবে রান করে, সেখানে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কিভাবে চলে, সেখানের এইচ. আর. পলিসি কি, ক্লাইন্টদের সাথে কিভাবে ডিল করতে হয়, ফিন্যান্সিয়াল ম্যাটারগুলো কিভাবে সমাধান করতে হয় ইত্যাদি আরও অনেক কিছু।
অনেকেই মনে করে উদ্যোক্তা এবং চাকরীর ব্যাপারটি একটি অপরটির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, কিন্তু আমি এই ব্যাপারটিকে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করি। প্রকৃতপক্ষে আপনি যদি আপনার চাকরীর জীবনেও উদ্যোগী হয়ে কাজ না করতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনি সেখানেও ভাল পারফর্ম করতে পারবেন না। আপনাকে আলাদাভাবে গাইড করে আপনাকে দিয়ে কিন্তু কোম্পানি আউটপুট নেবে না, বরং কখন কোন কাজটি করতে হবে তা বুঝে যদি আপনি আপন উদ্যোগে ভালভাবে করেন এবং কাজটি করার পরবর্তীতে যদি নিজে উদ্যোগ নিয়ে কোনকিছু শেখার চেষ্টা করেন কেবলমাত্র তখনই আপনার পক্ষে সম্ভব চাকরী জীবনে সফলতা অর্জন করা।
প্রশ্নঃ বাজারে তো আরও অনেক ধরনের ইন্টেরিয়র কোম্পানি রয়েছে, সেখানে ইন্টেরিয়র স্টুডিও ব্যাতিক্রম কেন?
লিয়াকত আলি চাকলাদার মারুফঃ আগে আমি আমার যে প্রফেশনে ছিলাম সেখানে যে সমস্যা গুলো ফেস করতে হত তার মধ্যে একটি অন্যতম সমস্যা হলো, আমরা যখন এপার্টমেন্ট সেল করতাম পরবর্তী স্টেপে গিয়ে ক্লাইয়েন্টরা ভাল ইন্টেরিয়র ফার্ম খুঁজে পেতো না, সো তখন ক্লায়েন্টরা আমাদের কাছে সাজেশন চাইত কোন কোম্পানির সাথে কাজ করলে ভাল হয় বা আমাদের পরিচিত ভাল কোনো কোম্পানি আছে কি না যারা প্রফেশনালি ভাল কাজ করে। তখন দেখা যেত ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে ভাল কোম্পানির সাপোর্ট দিতে পারতাম না। এর কারণ হলো আমি যখন ৭ বছর আগে ব্যবসা শুরু করি তখন বাংলাদেশে তেমন কোন ভাল ইন্টেরিয়র কোম্পানি দেখা যেত না।
কয়েকবারই একই ধরনের সমস্যা ফেস করলাম, ক্লায়েন্টরা ভাল কোম্পানির সাজেশন চাচ্ছে কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। তখনই আমার মাথায় এলো যে, এই ইন্ডাস্ট্রিতে একটা গ্যাপ আছে, তখন আমার মনে হল যে এই উদ্যোগটা যদি আমি নেই! প্রফেশনাল একটা আর্কিটেক্চার টিম হায়ার করে প্রফেশনালি যদি কাজটা শুরু করতে পারি সেক্ষেত্রে ভাল কিছু করার সুযোগ আছে।
সো সেই ভাবনা থেকেই ২০১৪ সালে আমার কোম্পানিটির যাত্রা বলতে পারেন। বর্তমানে আমার কোম্পানিটিতে ১২ জন গ্রাজুয়েট আর্কিটেক্ট এবং ৪ জন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে কাজ করছে। এখন আসি , অন্যদের থেকে আমাদের কোম্পানি আলাদা কোন দিক দিয়ে? সবথেকে বড় পার্থক্য হলো ম্যাক্সিমাম কোম্পানির যেখানে ২/৪ জন আর্কিটেক্ট কাজ করছে সেখানে আমাদের ১২ জন দক্ষ আর্কিটেক্ট ও ৪ জন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছে।
প্রশ্নঃ আমাদের দেশের ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সম্ভাবনা নিয়ে আপনি কি বলবেন?
লিয়াকত আলি চাকলাদার মারুফঃ আমি মনে করি বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ কিন্তু নিম্ন আয়ের দেশ ছিল। একটা জিনিষ ভেবে দেখেন, একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের মানুষেরা এত বড় বড় এপার্টমেন্ট কেনার কথা কল্পনাও করত না।
কিন্তু এখনকার অবস্থা দেখেন, আগের দিন কিন্তু এখন আর নেই। বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশে রুপান্তরিত হয়েছে। জিডিপি রেটও অনেক বেটার। এখন অহরহ ফ্লাট, এপার্টমেন্ট বেচা কেনা হচ্ছে। মানুষ যে দামে এপার্টমেন্ট কিনছে তার ২০-৩০% কিন্তু রেখে দিচ্ছে এপার্টমেন্টটিকে সুন্দর ও নান্দনিক করে তুলতে। শুধু তাই নয়, দেখবেন বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টও কিন্তু এর থেকে দূরে নেই। এভাবে ভাবতে পারলেই বুঝবেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সম্ভাবনা কততুকু।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ব্যবসায়ের লক্ষ্য ও করনীয় সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
লিয়াকত আলি চাকলাদার মারুফঃ সত্যি বলতে এখানে আরও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। ব্যাপারটি লক্ষ্য করুন, দেশে এতদিন যাবত এই সেক্টরে ব্যবসায় হচ্ছে কিন্তু কোন অথরিটি এই সেক্টরে এখনও হয়নি। আমরা যেকোনো ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকালে দেখতে পাব তাদের একটা স্পেসিফিক অথরিটি আছে, অরগানাইজেশন আছে যে অরগানাইজেশন ওই ইন্ডাস্ট্রির রুলস রেগুলেশন এবং অন্যান্য কন্ট্রোল করে।
আমরা যদি রিয়েল এস্টেট এর দিকে তাকাই, সেখানে রিহ্যাভ আছে, আইটি ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকাই, সেখানে বেসিস আছে এভাবে প্রত্যেকটা ইন্ডাস্ট্রিরই রেগুলেটর আছে। কিন্তু আমাদের ইন্টেরিয়র ইন্ডাস্ট্রির এখনও কোনো অথরাইজড অরগানাইজেশন নেই যে অরগানিজেশন অর বডিটা এই ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ন্ত্রন করবে। সুতরাং আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, এটাই প্রকৃত সময় এই ইন্ডাস্ট্রির দিকে নজর দেওয়া, এই বিষয়গুলো খেয়াল করার। এর ফলে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভোক্তারাও উপকৃত হবে এবং আমাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারবে।
প্রশ্নঃ ছোট বেলায় আপনার স্বপ্ন কি ছিল? আপনার সাফল্যের পেছনে মূল মন্ত্র কি?
লিয়াকত আলী চাকলাদার মারুফঃ খুবই মজার একটা প্রশ্ন। আসলে ছোট বেলায় তো মানুষের কত ধরনের স্বপ্নই থাকে! আমার ও এর ব্যাতিক্রম নয়। সত্যি বলতে আমার মধ্যে এক এক সময় এক এক ধরনের স্বপ্ন উঁকি দিত। আমি যখন একদম ছোট তখন মনে হতো, “আমি বড় হয়ে পাখি হবো, বিভিন্ন জায়গায় উড়ে বেড়াব।“ একটা সময় পরে বুঝতে পেরেছি যে, না এ তো করা যাবে না।
এরপর যখন একটু একটু করে বড় হতে লাগলাম তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বপ্ন উঁকি দিত মনে। কখনো মনে হয়েছে বড় হয়ে অনেক বড় সাংবাদিক হবো কখনো মনে হয়েছে খুব লেখালেখি করব, কবি, সাহিত্যিক হবো, আবার মনে হয়েছে মানুষের সেবায় কাজ করব ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম অনেক কিছু মনে হতো, তবে যখন ম্যাচুরড হলাম তখন মনের মধ্যে আবার অন্য ইচ্ছা উঁকি দিতে শুরু করলো।
মনে হলো নিজের কিছু করবো, যেখানে নিজের একটা পরিচয় থাকবে, একটা প্রতিষ্ঠান থাকবে, যেখান থেকে মানুষ আমাকে চিনবে। সফলতার পেছনে মূল মন্ত্রের কথা বললে আমি বলব, আপনাকে প্রথমে একটা জায়গা বেছে নিতে হবে যেটার মাধ্যমে আপনি সেটল হতে চান বা কিছু করতে চান, তারপর সেই অনুযায়ী আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে।
প্রশ্নঃ অন্যদের তুলনায় আপনি ব্যাতিক্রম কোন দিক থেকে?
লিয়াকত আলি চাকলাদার মারুফঃ ব্যাতিক্রম কোনটি আছে জানতে চাইলে আমি প্রথমেই যে গুনটির কথা বলব তা হলো আমার কনফিডেন্স। আমি আমার নিজের প্রতি ১০০% কনফিডেন্ট। অর্থাৎ আমি যেটা বলব সেটাই করবো। এই দিক দিয়ে আমি মনে করি আমি ব্যাতিক্রম অন্যদের থেকে।
তারপর বলবো আমার পজিটিভনেস, মানুষকে সৃষ্টিকর্তা ১০০% পারফেক্ট করে সৃষ্টি করেননি। আমি জানি আমার ও ল্যাকিংস আছে, তবে আমি চেষ্টা করি আমার মধ্য থেকে পজিটিভ ব্যাপারটিকে খুঁজে বের করতে। এবং আমি পেয়েও যাই। যেদিকটাকে আমার কাছে মনে হয় আমি সব থেকে ভাল পারব আমি সেটিকেই বেছে নেই এবং শেষ পর্যন্ত লেগে থাকি। এটি আমাকে অনেক হেল্প করে। বর্তমান সেঞ্চুরিতে একটা মানুষের অনেক অনেক গুণ থাকবে এটাই স্বাভাবিক, তবে আমি মনে করি এই গুনগুলোর মধ্যে থেকে বেস্টটা খুঁজে বের করে লেগে থাকাটাই উত্তম।
নাম্বার তিন বলবো, আমার কথার সাথে সর্বদা কাজের মিল থাকে যা আমাকে আমার গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করে।
প্রশ্নঃ আপনি তো ‘ই ক্লাব’ এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত, এই সংগঠনের ব্যাপারে কিছু বলুন।
লিয়াকত আলি চাকলাদার মারুফঃ ‘ই ক্লাব’ অর্থাৎ “Entrepreneur Club of Bangladesh” এটিকে আমার স্বপ্নের ক্লাব বলতে পারেন। কয়েক বছর আগে আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে এই ক্লাবটি শুরু করি।
একটা ব্যবসা শুরু করার সময় অনেক কিছু জানার থাকে যেমন, কিভাবে শুরু করতে হয়? কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়? টিন কিভাবে করতে হয়? ভ্যাট? কিভাবে প্রব্লেমগুলো সমাধান করতে হয়? কিভাবে প্রজেক্ট ম্যানেজ করতে হয়? কিভাবে আডমিনিস্ট্রেশন মেইন্টেইন করতে হবে? কিভাবে ক্লায়েন্ট সোর্স করতে হবে?ইত্যাদি আরও অনেক কিছু।
আমি যখন ৫ বছর আগে ব্যবসা শুরু করি তখন এই বিষয়গুলো তেমন জানা ছিল না আমার। এমন কাউকে আমি পাশে পাইনি যে আমাকে একটু আস্থা দেবে কিংবা একটু পথ দেখাবে। এই কারনে আমার অনেক বেশি সময় নষ্ট হয়েছে একই সাথে অনেক বেশি টাকার অপচয় হয়েছে এবং অনেক বেশি ভুল ও করেছি কাজ করতে যেয়ে। আমাদের দেশের জন্য আর একটা বড় বিষয় হলো তরুণ উদ্যোক্তারা ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যেই ব্যবসায় গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় পর্যাপ্ত গাইডলাইনের অভাবে।
আমরা যখন আমাদের ব্যবসাকে এতদিন সারভাইভ করাতে পেরেছি, তখন আমাদের মনে হলো আমাদের এমন কিছু করা উচিত যেখান থেকে তরুণ উদ্যোক্তারা শিখতে পারবে কিভাবে কি করতে হয়? তাহলে আমাদের মত তাদেরকে এত সাফার করতে হবে না কিংবা তারা এতটা হতাশ হবে না। এতে করে তরুণ উদ্যোক্তাদের ড্রপ আউটের ব্যাপার টা কমে যাবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে। এই উদ্দেশ্যগুলোকে বাস্তবায়নের জন্যই মুলত এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা।
প্রশ্নঃ উদ্যোক্তা হতে চায় এমন তরুণদের উদ্দেশ্যে আপনার কি পরামর্শ?
লিয়াকত আলি চাকলাদার মারুফঃ আমি তরুণদেরকে নিয়ে খুবই আশাবাদী। বর্তমানে তরুণরা অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ। কিন্তু প্রধান সমস্যা হলো সঠিক গাইডলাইনের অভাব। তরুণদের উদ্দেশ্যে আমি শুধু এতটূকুই বলব যে, তাদের যে কাজটা ভাল লাগে, যে কাজটা তারা করতে চায় সেই কাজের পেছনে একটু পড়াশোনা করে নিতে হবে। এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে ভালমত জেনে নিতে হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাকে টার্গেট ফিল আপ না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকতে হবে। আমাদের তরুণরা সত্যিই অনেক বেশি ক্রিয়েটিভ আর পরিশ্রমী, শুধুমাত্র ধৈর্য আর সঠিক গাইডলাইন পেলেই তারা আমাদের দেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে পারে।