দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘শত্রু রাষ্ট্র’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে উত্তর কোরিয়ার সংবিধান। সম্প্রতি পিয়ংইয়ংয়ের সংবিধান সংশোধনীতে কী কী অন্তর্ভুক্ত ছিল তা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম রোডং সিনমুন। সেখানেই দক্ষিণ কোরিয়াকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করার বিষয়টি বলা হয়েছে। খবর বিবিসি।
রোডং সিনমুন এই সংবিধান পরিবর্তনকে ‘অপরিহার্য এবং বৈধ পদক্ষেপ’ বলে এমন এক সময় উল্লেখ করল যখন দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী সড়ক এবং রেলপথ ধ্বংস করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই ঘটনাকে ধাপে ধাপে দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ বলে বর্ণনা করেছে।
কিছু পর্যবেক্ষক এই সংবিধান সংশোধনীকে প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন, কারণ উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেই একীভূতকরণের ধারণা ত্যাগ করেছিলেন। সে সময় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম মতে কিম বলেছিলেন যে, দুই শত্রু রাষ্ট্র এবং যুদ্ধে লিপ্ত দুই পক্ষের মধ্যে একটি সম্পর্কে পরিণত হয়েছে আন্তঃকোরীয় সম্পর্ক।
এরপর জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একীভূতকরণকে অসম্ভব বলে ঘোষণা করেন কিম। দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘মূল শত্রু’ হিসাবে উল্লেখ করা হবে বলেও তখন ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
সেই সময় থেকে, বিশেষ করে গত কয়েক মাসে, দুই কোরিয়ার মধ্যে একাধিক পাল্টাপাল্টি ঘটনার ফলে উত্তেজনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘শত্রু রাষ্ট্র’ শব্দটি উত্তর কোরিয়া প্রায় এক বছর ধরে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন র্যান্ড করপোরেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রুস বেনেট। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের শেষের দিকে যখন দুই কোরিয়ার একীভূতকরণের ধারণাকে বাতিল করা হয় তখনই সংঘর্ষের ঝুঁকি এবং উত্তেজনার বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে কিম এবং তার বোন দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে উত্তেজনা বাড়িয়েছেন। ফলে ঝুঁকি বেড়েছে।
অনেকেই আশা করেছিলেন যে, গত সপ্তাহে সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলির (এসপিএ) বৈঠকে পিয়ংইয়ং একীভূতকরণ এবং সীমান্ত নীতি সম্পর্কিত সংবিধান সংশোধনী আনবে। কিন্তু তখন সে ধরনের কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা। কারণ, এই সংঘাতের গুরুতর পরিণতি সম্পর্কে দুই পক্ষই সচেতন।