মুসলিম আলিমদের মধ্যে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত মিথ্যার বিষয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। মু’তাযিলা সম্প্রদায়ের আলিমগণ মনে করতেন যে, ভুলবশত যদি কেউ কোনো কিছু বলেন যা প্রকৃত অবস্থার বিপরীত তবে তা শরীয়তের পরিভাষায় মিথ্যা বলে গণ্য হবে না। শুধুমাত্র জেনেশুনে মিথ্যা বললেই তা মিথ্যা বলে গণ্য হবে। এ মতের পক্ষে তাঁরা যুক্তি দেখান যে, মিথ্যা বলার উদ্দেশ্য হলো কারো সাথে প্রতারণা করা। ভুলবশত মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে প্রতারণা করার উদ্দেশ্য থাকে না। তাই এটি মিথ্যা বলে গণ্য হবে না।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আলিমগণ এ মতের প্রতিবাদ করেছেন। তাঁদের মতে, না-জেনে বা ভুলে মিথ্যা বললেও তা শরীয়তের পরিভাষায় মিথ্যা বলে গণ্য হবে। এ মতের পক্ষে তাঁরা যুক্তি দেখান যে, মিথ্যা বলার সংজ্ঞা হলো প্রকৃত অবস্থার বিপরীত কোনো কথা বলা। ভুলবশত মিথ্যা বলার ক্ষেত্রেও প্রকৃত অবস্থার বিপরীত কোনো কথা বলা হয়। তাই এটি মিথ্যা বলে গণ্য হবে।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মতই ইসলামের প্রমাণ-প্রমাণে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত উভয় প্রকার মিথ্যার নিন্দা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা তওবা: ১১৯)
وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلَالٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ
আর তোমরা তোমাদের জিহ্বা দ্বারা মিথ্যা বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, যাতে তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা কর। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে, তারা সফল হবে না। (সূরা নাহল: ১১৬)
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই তা একটি অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্টতম পথ। (সূরা বনি ইসরাঈল: ৩২)
উল্লেখ্য, ইচ্ছাকৃত মিথ্যার শাস্তি অনিচ্ছাকৃত মিথ্যার চেয়ে বেশি কঠিন। ইচ্ছাকৃত মিথ্যার শাস্তি হলো জেলে যাওয়া, বেত্রাঘাত করা বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া। অনিচ্ছাকৃত মিথ্যার শাস্তি হলো কেবল তাওবা করা।