‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়/ আড়ালে তার সূর্য হাসে।’ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতার মতোই আবহাওয়াবিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকে বিভিন্ন অ্যাপ। গত রোববার রাতে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল সোমবারও সারা দেশে দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি দেখার জন্য অনেকেই বিভিন্ন অবহাওয়াবিষয়ক অ্যাপ ব্যবহার করেছেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের সম্ভাব্য গতি জানানোর পাশাপাশি গতিপথও প্রায় নির্ভুলভাবে জানিয়েছে আবহাওয়াবিষয়ক অ্যাপগুলো। ঘূর্ণিঝড়সহ আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য কীভাবে প্রায় নির্ভুলভাবে অ্যাপগুলো জানাতে পারে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অনেকেরই। আবহাওয়াবিষয়ক অ্যাপগুলোতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও কাজের ধরন জেনে নেওয়া যাক।
যেভাবে কাজ করে আবহাওয়া অ্যাপ
বর্তমানে একশ’র বেশি ভাষায় বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার তথ্য দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাকুওয়েদার। এ জন্য নিজেদের বিশাল তথ্যভান্ডার ব্যবহারের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় এক হাজারের বেশি স্থান থেকে আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির তৈরি অ্যাকুওয়েদার অ্যাপ যেকোনো স্থানের এক থেকে পাঁচ দিনের তাপমাত্রা, আর্দ্রতার পরিমাণ, বাতাসের গতিবেগের প্রায় নির্ভুল পূর্বাভাস দিতে পারে। স্যাটেলাইট ও ভূপৃষ্ঠের রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে অ্যাকুওয়েদার। সেই তথ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যালগরিদম ও আবহওয়াবিদদের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরি করা হয়।
যেভাবে নির্ভুল তথ্য দেয় অ্যাপ
অ্যাকুওয়েদারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন স্মিথ জানিয়েছেন, আবহাওয়াবিষয়ক অ্যাপগুলো এখন বিভিন্ন প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার মডেলগুলোও এখন অনেক বেশি নির্ভুল হয়ে উঠেছে। আর তাই অ্যাপগুলো বর্তমানে তাৎক্ষণিকভাবে আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্য জানাতে পারে। অ্যাকুওয়েদার ১৯৬২ সাল থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে আসছে। অ্যাকুওয়েদারের প্রধান লক্ষ্য হলো জীবন বাঁচানো ও সম্পত্তি রক্ষা করা।
মার্কিন আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রতিষ্ঠান ফোরকাস্ট ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা এরিক ফ্লোহর জানিয়েছেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এখন বেশ আলোচিত। প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে আবহাওয়াবিষয়ক অ্যাপগুলোর বিভিন্ন তথ্য নির্ভরযোগ্য হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যদ্বাণীও সঠিক হচ্ছে। এর মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে প্রকৃত অবস্থা জানা যাচ্ছে।
আবহাওয়ার তথ্য যেভাবে সংগ্রহ করা হয়
যুক্তরাজ্যের মেট অফিস ডিজিটাল আবহাওয়ার মানচিত্র উন্নয়নে কাজ করে থাকে। মেট অফিসের আবহাওয়া অ্যাপের পণ্য ব্যবস্থাপক সোফি ইয়োম্যানস-স্মিথ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তের আবহাওয়ার খবর কী আপনি তা সরাসরি জানতে পারছেন। আগে এক দিন আগে আবহাওয়ার নির্ভুল পূর্বাভাস জানা যেত। এখন পাঁচ দিন আগেই আবহাওয়ার নির্ভুল পূর্বাভাস জানা যাচ্ছে। রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিস ২০২৩ সালের আগস্টে আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে আরও নির্ভুল করতে স্কটিশ বিমান সংস্থা লোগানএয়ারের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। লোগানএয়ারের বিমানের সঙ্গে যুক্ত সেন্সর চারপাশের পরিবেশগত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে। বিমানের সেন্সরের তথ্য থেকে বজ্রপাত ও কুয়াশাকে ভালোভাবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে।
অন্য অ্যাপের খোঁজখবর
আবহাওয়াবিষয়ক আরেকটি জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে ওয়েদার। অ্যাপটির মূল প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস (আইবিএম)। আর তাই আইবিএম ক্লাউড ব্যবহার করে আবহাওয়াবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে অ্যাপটি।
অ্যাপলের আইফোনে ওয়েদার নামের অ্যাপটিও আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে। ২০০৭ সালে অ্যাপটি চালু হয়। আইওএস ৮ থেকে আইওএস ১৫ অপারেটিং সিস্টেমে চলা আইফোনে ওয়েদার অ্যাপের তথ্য ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে আইওএস ১৬ অপারেটিং সিস্টেমে চলা আইফোনে নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে অ্যাপল।