আজকের এই প্রতিশ্রুতিশীল আধুনিক বিশ্বে প্রতি মিনিটে এমনকি প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে একজন উদ্যোক্তার জন্ম হয়। প্রতিটি মানুষের মনেই জন্ম নেয় কিছু নতুন উদ্ভাবন, কিছু নতুনত্ব তৈরী করার ইচ্ছা। আর নতুনত্ব দ্বারাই তৈরী হচ্ছে আমাদের এই বিশ্ব। কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের এই বিশ্বে কয়জনই বা সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন?
একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে আপনার চিন্তা ও প্রগতির প্রতি অনড় থাকতে হবে আর থাকতে হবে আপনার নিজের প্রতি আস্থা। সেই আস্থাকে নিয়ে যেতে হবে পর্বতসমান উচ্চতায়। কিন্তু একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে দিতে হবে অনেক কিছু বিসর্জন, করতে হবে ত্যাগ। কথায় আছে, একজন উদ্যোক্তার জন্য নেশা হচ্ছে “সাফল্য”। মুখের কথায় যেমন নেশার বস্তু ছাড়ানো যায় না, তেমনি উদ্যোক্তা হতে হলে সাফল্যকে ছাড়া যাবে না। সাফল্যকে লক্ষ্য রেখেই নিজ কাজ করে যেতে হবে।
কিন্তু এই সাফল্য সহজে ধরা দিবে না। তাই সাফল্যকে পেতে হলে পার করতে হবে বহু চড়াই উতড়াই। আর এই চড়াই উতড়াই পার হতে গিয়ে আপিনাকে সম্মুখীন হতে হবে অনেক কিছুর। কিন্তু থেমে থাকা যাবে না। পারি দিতে হবে বহুদূর। একজন উদ্যোক্তার জীবনে সাফল্য বয়ে আনা চাট্টিখানি কথা নয়। পরীক্ষার মতই একজন উদ্যোক্তার জীবন। পরীক্ষায় যেমন কী প্রশ্ন আসবে তা আগে থেকে জানা থাকে না, তেমনি আপনার কাজে সামনে কি আসতে চলেছে সেটাও আপনার জানা থাকবে না। জীবনের অনেক বড় বড় ধাক্কায় অনেকে ছেড়ে দেয় হাল, ভেঙ্গে যায় তাদের ভালোবাসার স্বপ্ন গুলো।
“Stella & Dot” এর ফাউন্ডার জেসিকা হারিন বলেন, “You have to see failure as the beginning and the middle, but never entertain it as an end.”
অর্থাৎ আপনার যেকোনো কাজে আপনার বিফলতা গুলোকে সবসময় আপনার কাজের শুরু কিংবা কাজের মাঝখানের কোনো ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। কখনোই এই বিফলতাকে শেষ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। আর সেজন্য নিতে হবে নিজের কিছু করতে চাইলে নিতে হবে “ঝুঁকি”। আর এই ঝুঁকিকে এড়িয়ে গেলে কখনোই সফলতা ধরা দিবে না। তাই “ঝুঁকি”-র সাথে মোকাবিলা করতে হলে করতে হবে আপনাকে সঠিক মার্কেটিং।
মার্কেটিং এর ব্যাপারে আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু আবার অনেকেই জানি না। একটি সঠিক মার্কেটিং নির্দেশ করে আপনার ব্যবসা ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকবে। সেজন্য যেকোনো কাজের শুরুতে আগে থেকে আপনাকে আপনার ব্যবসার মার্কেটিং নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার ব্যবসার মার্কেটিং নিশ্চিত করতে সর্বপ্রথম আপনাকে দু’টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।
- “কাদের জন্য আপনার প্রোডাক্ট তৈরী করবেন? কেন করবেন?”
- “যাদের জন্য বানাবেন তাদের কি কি উপকারে আসবে?”
এর বাইরে আরোও প্রশ্ন হয়তো এতক্ষণে আপনার মাথায় এসে গেছে। এই দু’টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলে কিংবা এই দু’টি প্রশ্নের বিষয়ের সাথে কীভাবে আপনার প্রোডাক্ট কীভাবে মিলাবেন তা বুঝতে পারলে আপনি আপনার অন্যান্য প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে পাবেন। তাহলে এখন এই দু’টি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা যাক।
যেকোনো ব্র্যান্ড যখন প্রোডাক্ট তৈরী করে তখন তারা আগে থেকে নিশ্চিত করে নেয় তারা কাদের জন্য তাদের প্রোডাক্ট তৈরী করছে। কেন করছে। আপনি যদি আপনার বন্ধুকে কিংবা আপনার কাছে মানুষকে কিছু উপহার দিয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই তার পেছনে কারণ রয়েছে। আর সেই সাথে যে জিনিসটি আপনি আপনার প্রিয় মানুষটিকে উপহার দিতে যাচ্ছেন সে জিনিসটি অবশ্যই আপনি আপনার প্রিয় মানুষটার পছন্দানুযায়ী বানিয়েছেন যাতে আপনার প্রিয় মানুষটির আপনার দেওয়া জিনিসটি পছন্দ হয়, সে যেন সারাজীবন আপনার দেওয়া জিনিসটি মনে রাখে। মনে রাখে আপনাকেও।
একজন উদ্যোক্তার জীবনে এই ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আপনার কাজকেই শুধু ভালোবাসলেই হবে না। ভালোবাসতে হবে আপনার ক্লায়েন্দেরকেও। ক্লায়েন্টদের পছন্দ এবং অপছন্দ সব কিছু সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। সেজন্য আপনাকে করতে হবে “রিসার্চ”। এই রিসার্চের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার ক্লায়েন্টরা আপনার থেকে কি রকম জিনিস চায়, তারা কি কি সুযোগ সুবিধা চায়, কি রকম সুবিধা থাকলে তারা আপনার পণ্য ক্রয় করবে। তাই আপনার ক্লায়েন্টের সাথে আপনার সম্পর্ক হতে হবে অন্তরঙ্গ।
“Don’t listen what people say, watch what they want.”
আপনার কাজের ক্ষেত্রে অনেকেই অনেক কথা বলবে, অনেকেই আপনাকে কটুক্তি করবে। আপনার কাজকে ছোট করে দেখবে। আপনার মনে হীনম্মন্যতা তৈরী করবে। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে এই মানুষগুলোই আপনার জন্য কল্যাণকর এবং আশীর্বাদস্বরূপও বটে। ভাবছেন কেন এই কথা বলছি? একটু ভেবে দেখুন, স্বভাবতই আপনার কাজের এবং পণ্যের ব্র্যান্ডিং এর জন্য আপনাকে টাকা খরচ করতে হবে। বাড়তি পরিকল্পনা এবং বাড়তি খরচেরও প্রয়োজন। কিন্তু আপনাকে কটুক্তি করা আপনার দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলা মানুষগুলো বিনা পয়সায় আপনার ব্র্যান্ডিং করে দিচ্ছে যার কারণে অনেকেই আপনাকে নাম জানছে, জানছে আপনার কাজ সম্পর্কে।
আমাদের আশেপাশে আমাদের নিয়ে কথা বলার মতো মানুষের অভাব নেই। এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে বর্তমান বিশ্বের সফল উদ্যোক্তা দেরও “পাগল” খ্যাতি পেতেও হয়েছিল। বর্তমান বিশ্বের বহুল আলোচিত “জ্যাক মা” নিজেও এই ব্যাপারগুলো থেকে পরিত্রাণ পাননি। কিন্তু দিনশেষে এত কষ্টের পর যখন সেই মানুষ গুলো আপনার জিনিস কিনছে এবং আপনার ক্লায়েন্ট হিসেবে আপনার সাথেই যোগাযোগ করছে, তার থেকে বড় একটা তৃপ্তিময় প্রাপ্তি বোধ হয় আর নেই। কিন্তু এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরী করতে হলেও আপনাকে আপনার সবর্স্ব দিয়ে সাধনা করতে হবে। আপনার কাজকে ভালো বাসতে হবে। নিজ কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হতে হবে। এর মধ্যে আসা বাঁধা বিপত্তিগুলোকে আপনার কাজ দেখিয়ে দিতে হবে। জবাব দিতে হবে আপনার কাজের মাধ্যমে।
তাই একজন সফল উদ্যোক্তা হলে নিজেকে যেকোনো কিছুর জন্য তৈরী রাখতে হবে। নিজ ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলোকে সর্বপ্রথম প্রাধান্য দিতে হবে। ক্লায়েন্টরা যেন কোনো রকম অসুবিধার সম্মুখীন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সেজন্য সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া গুলো অডিয়েন্স তৈরী করার সহজ একটি মাধ্যম। আর এই অডিয়েন্সরাই তৈরী করবে আপনাকে, তৈরী করবে আপনার পরিচিতিকে।
দিনশেষে আপনি যখন আপনার আপনি “ধন্যবাদ” নামক বার্তাটি পাবেন, তার থেকে তৃপ্তির আর কিছু কি হতে পারে?