কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) স্টার্টআপ কোম্পানি ওপেনএআই তাদের জটিল অলাভজনক করপোরেট কাঠামো পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে। কোম্পানির সিইও স্যাম অল্টম্যান সম্প্রতি এক বৈঠকে এ কথা জানান। ফরচুনের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার লক্ষ্যে পরিবর্তনটি আনা হচ্ছে।
সিইও স্যাম অল্টম্যান বলেছেন, ‘ওপেনএআই একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ থেকে সরে এসে লাভজনক সংস্থায় পরিণত হবে।’ তবে পরিবর্তনটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে ও ওপেনএআইর নতুন করপোরেট কাঠামো কেমন হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত
কিছু বলেননি তিনি। কোম্পানির একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা সবার জন্য
উপকারী। তারা আরো জোর দিয়ে বলছে, যদিও ওপেনএআই একটি লাভজনক মডেলে রূপান্তর হওয়ার দিকে আগ্রসর হচ্ছে, তবে এর অলাভজনক দিকটি এখনো তাদের মিশনের কেন্দ্রবিন্দু এবং কোম্পানির কার্যক্রমের অংশ হয়ে থাকবে।
এনগ্যাজেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ওপেনএআই একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি দাতাদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভর করত। কোম্পানির দেয়া তথ্যানুযায়ী, সংস্থাটি কয়েক বছর ধরে মোট ১৩ কোটি ৫ লাখ ডলার অনুদান সংগ্রহ করেছে। পরে অপর্যাপ্ত তহবিল সমস্যা সমাধানের জন্য একটি লাভজনক সহায়ক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল ওপেনএআই। ফরচুনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ওপেনএআইর অলাভজনক সংগঠন বর্তমানে তার লাভজনক শাখার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। লাভজনক শাখাটি একটি হোল্ডিং কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যেখানে মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করে। এ ব্যবস্থার অধীনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কতটা মুনাফা বিতরণ করা যেতে পারে, তার একটি সীমা রয়েছে। এ সীমার অতিরিক্ত মুনাফা ওপেনএআইর অলাভজনক বিভাগের কাছে যায়।
গত জুনে দি ইনফরমেশনের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওপেনএআইর রাজস্ব দ্রুত বাড়ছে। কোম্পানিটি বছরের প্রথমার্ধে উল্লেখযোগ্যভাবে তার বার্ষিক আয় বৃদ্ধি করেছে। এ প্রবৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছে ওপেনএআইর তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল চ্যাটজিপিটির সাবস্ক্রিপশন সংস্করণ। সম্প্রতি কোম্পানিটি জানিয়েছে, এক কোটির বেশি পেইং সাবস্ক্রাইবার (অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সেবা নেয়া) রয়েছে চ্যাটজিপিটিতে। রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে ২০ কোটির বেশি সাপ্তাহিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে, যা গত শরৎ মৌসুমে চ্যাটবটের ব্যবহারকারীর সংখ্যার দ্বিগুণ।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, ফরচুন ৫০০ কোম্পানিগুলোর ৯২ শতাংশ তাদের এ সেবা ব্যবহার করছে। এর মানে হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৫০০টি বৃহত্তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর প্রায় সবক’টিই তাদের কাজে ওপেনএআইর প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করছে। এছাড়া চলতি বছর জুলাইয়ে জিপিটি ফোরও মিনি প্রকাশের পর থেকে ওপেনএআইর স্বয়ংক্রিয় অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ওপেনএআইর জটিল কাঠামোর কারণে গত বছর কোম্পানির অলাভজনক পরিচালনা পর্ষদ স্যাম অল্টম্যানকে সিইও পদ থেকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কারণ তার নেতৃত্বের সক্ষমতায় আর আস্থা রাখতে পারছিলেন তারা। যে বোর্ডটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা ভেঙে দেয়া হয় মাত্র পাঁচদিন পর এবং পরবর্তী সময় একটি নতুন বোর্ড তৈরি করা হয়। নতুন প্রতিষ্ঠিত বোর্ড তখন অল্টম্যানকে সিইও হিসেবে পুনর্বহাল করে।